নিজেদের নতুন মেয়র বেছে নিতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে এবারের সিটি নির্বাচনে আছে নানা সমীকরণ, নাটকীয়তা।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে যেমন দলীয় শাস্তির মুখে পড়েছেন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার; অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পুরোনো দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়েছে।
বিএনপি আগেই জানিয়ে দেয়, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনেক নির্বাচনের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তারা।
এর পরও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন তৈমূর, সাখাওয়াতসহ বিএনপির পাঁচ নেতা। পরে তৈমূর ছাড়া বিএনপি নেতাদের সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন দলীয় নির্দেশে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের কথা জানান সাখাওয়াত হোসেন। এতে আওয়ামী লীগের আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হন তৈমূর।
তৈমূর এর আগে বিএনপির ব্যানারে সিটি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত থাকেননি, সরে দাঁড়ান ভোটের আগের দিন। এক দশক পর অনেক পরিকল্পনা নিয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার দাবি, এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৌসুম।
বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতাকে তার দলের নেতারা ভোট দেবেন কি না, তা জানার চেষ্টা করছে নিউজবাংলা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে আগে থেকেই মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সিটি নির্বাচন নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত।
তৈমূরপন্থিরা ভোট দিলেও দলের সঙ্গে মিলেয়ে ভোট বর্জন করছেন সাখাওয়াতপন্থিরা। তাদের নেতিবাচক অবস্থানের কারণে তৈমূরের ভোট বাক্সে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটার নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রশ্ন রাখা হয়, রোববার ভোট দিতে যাবেন কি না।
তিনি বলেন, ‘আমার দল যে ভোট বর্জন করছে, সেই ভোট দিই কীভাবে? দল তো স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেবে না, সেই সঙ্গে এটাও বলা হয়েছিল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দল যদি নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে আমাকেই মনোনয়ন দিত, তৈমূর সাহেবকে না।
‘যদিও ভোট আমার নাগরিক অধিকার, কিন্তু এই দেশে তো নাগরিক অধিকার বলতে কিছু নেই। এমন অবস্থায় এই নামমাত্র নাগরিক অধিকারের দোহাই দিয়ে আমি আমার দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করতে পারি না।’
তবে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সবুর খান সেন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল দুজনই তৈমূরের পক্ষে কাজ করছেন। তারা সশরীরে তৈমূরের সব কার্যক্রমে আছেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা জামান বলেন, ‘আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই ভোট দিতে যাব। এটা আমার অধিকার। আমি বিএনপির রাজনীতি করি, আর ভোটটাও তৈমূর আলম খন্দকারকেই দেব।
‘কারণ উনি কর্মিবান্ধব নেতা। তাকে ভোট না দিলে বিএনপিতে তার অবদানকে অস্বীকার করা হবে। উনি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। দল কেন ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থান নিল, তা আমার বোধগম্য না। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী আছে বিএনপির, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিল না।’
একই বক্তব্য মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রহিমা শরীফ মায়ারও।
ভোট দিতে যাবেন না বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজল। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে কীভাবে এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাই। দল নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই এই নির্বাচন আমার জন্য নয়।’
ভোট দেয়া তো আপনার নাগরিক অধিকার, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়, সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়, সেখানে আবার নাগরিক অধিকার বলে কিছু আছে নাকি।’