বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রার্থীরা চুপ, হিসাব-নিকাশে ভোটাররা

  •    
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১৬:২০

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দু-তিন বছর হলো গার্মেন্টস ব্যবসা করছেন তরুণ উদ্যোক্তা পৃথ্বী সাহা বাপ্পা। সিটি নির্বাচন নিয়ে তার ভোটের ভাবনা জানতে চাইলে বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। দেখি, কী হয়।’

চাষাঢ়া মোড়ে শহীদ মিনার ঘেঁষে চা বিক্রি করেন আজাদ। বেশ অনেক বছর ধরে এটাই তার পেশা। তেঁতুল, মাল্টা, কাঁচামরিচ, পুদিনা, লেবুসহ নানা বাহারি স্বাদের চা পাওয়া যায় তার কাছে। ভোটের উত্তাপ আছে তার দোকানেও।

পুদিনা পাতার একটা লাল চা চেয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। বলছিলেন, ভোটের হালচাল নিয়ে। কাকে ভোট দেবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা অভিমান ঝরে তার কণ্ঠে। আজাদ বলেন, ‘যামুই না ভোট দিতে। কোনো ইচ্ছা নেই।’

ভোট তো অধিকার, এ কথা বলেই আজাদ বলে বসেন, ‘ভোট অয় নাকি?’

তারপর দেখা হলো পেট্রল পাম্পকর্মী মন্টুর সঙ্গে। ভোট নিয়ে দারুণ উত্তেজনা তার মধ্যে। কোনো রাখঢাক না রেখে অকপটে বলে ফেললেন, ‘আর কারে দিমু, আইভী আপারেই দিমু। আমাগো এলাকায় যে উন্নয়ন করছে, তারেই ভোট দেয়া উচিত আমার।’

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দু-তিন বছর হলো গার্মেন্টস ব্যবসা করছেন তরুণ উদ্যোক্তা পৃথ্বী সাহা বাপ্পা। ভোটের ভাবনা জানতে চাইলে বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। দেখি, কী হয়।’

কেমন প্রার্থী বেছে নিতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা বলা কঠিন। সব তো একই রকম। দেখি, কাকে দিই।’

মরগ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দেখা হয় তরুণী আবিদা সুলতানার সঙ্গে। কৌশলী তরুণী সরাসরি না বললেও বুঝিয়ে দিয়েছেন নৌকার প্রতি তার সমর্থনের কথা।

তিনি বলেন, ‘নারীদের অধিকার রক্ষায় যিনি ভূমিকা রাখছেন, যিনি নারী ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারেন, সেই কথা বলছেন, তাকেই তো ভোট দেয়া উচিত।’

ভোটের দিন সকালে ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে চান হকার মজিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সবাই তো উন্নয়ন করার কথা কয়, আমাগো অবস্থা আগের মতোই থাহে।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্যতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার। ফাইল ছবি

২ নম্বর রেলেগেটের দিকে ফুটপাতের দোকানি রহিম অবশ্য পরিবর্তনমুখী। বললেন, ‘নতুন কাউরে আইন্যা দেহি, কী হয়।’

সিদ্ধিরগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, ‘আইভী আফা যে উন্নয়ন করছে, এইডা নতুন কইরা কওনের কী আছে। আমার একটা জায়গা ছিল, শুধু পাকা রাস্তা আছিল না বইলা কেউ ৫০ লাখও কয় নাই। গত দুই বছর আগে, দেখতে দেখতে পাকা রাস্তা আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত আইয়া পড়ছে।’

আর বলার অপেক্ষা রাখে না এই মধ্যবয়সী ভোটার কার সমর্থনে ইভিএম বাটন প্রেস করবেন।

পেট্রল পাম্পের কর্মচারী মনসুর বললেন, ‘এবার ইলেকশনে আমাগো দুই প্রার্থীই ভালা। কোনো সন্ত্রাস নাই। তয়, উন্নয়ত তো অনেক দ্যাখতাছি, এবার আইভী আফারে ভোট না দিলে বেঈমানি হইয়া যাইব।’

সাদিয়া পারভীন অবশ্য শোনালেন পরিবর্তনের সুর। তিনি বলেন, ‘তৈমূর সাহেবের মতো, জনপ্রিয় নেতাকে বিএনপি কেন যে বহিষ্কার করল এটা বুঝলাম না। ওনার একবার সুযোগ পাওয়া দরকার। একজন আর কত দিন, বলেন?’

তল্লা এলাকার জহিরুল সরাসরি না বললেও উন্নয়ন যার দ্বারা হবে তাকেই বেছে নিতে চান। তিনি বলেন, ‘খানপুর তল্লা এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বেশ কাজ হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এখনও বাকি অনেক কিছু। আমরা চাই আগামীতে যিনি আসবেন এলাকার সব উন্নয়নমূলক কাজ করবেন। কারণ তল্লা এলাকা অনেক ঘিঞ্ঝি। এখানে পোশাক শ্রমিকদের বাস।’

ওই এলাকার তরুণ ভোটার ইশতিয়াক আহমেদ শাওন বলেন, ‘আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো চিপাচাপা। মূল সড়ক থেকে অনেকটা নিচু। বৃষ্টি হলে পানি জমে। এবার যিনি জনপ্রতিনিধি হবেন তার কাছে এলাকার সব মানুষের চাওয়া, রাস্তার সমস্যা সমাধান।’

বন্দরের মাহমুদ নগরের নাদিম হাসান বলেন, ‘ব্রিজ করার কথা যে বলবে তারে ভোট দিমু। অনেক দিন ধরে বিচ্ছিন্ন আমরা। যারা আমাদের এই সমস্যা সমাধান করবেন তারেই চোখ বন্ধ করে ভোট দিমু।’

নির্বাচনের আগের দিন অনেকটা শান্ত জনপদে রূপ নিয়েছে ভোটের নগরী নারায়ণগঞ্জ। ১৭ দিনের জমাটি প্রচার শেষে নগরটি অনেকটাই নীরব। ঝুলছে পোস্টার, কিন্তু প্রার্থীদের সমর্থনে নেই কোনো মাইকিং। নেই পছন্দের প্রার্থীদের জন্য কর্মী-সমর্থকদের রাজপথ কাঁপানো মিছিল, স্লোগানের ধ্বনি।

নির্বাচনি আইন অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়ে প্রচার। প্রার্থীরা ফিরে গেছেন ঘরে। ফেরার আগে ভোটারদের কাছে টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে কোনো প্রার্থীই প্রকাশ করেননি নির্বাচনি ইশতেহার।

শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আলোচিত মেয়র প্রার্থী তৈমূর এ নির্বাচনকে ‘যুদ্ধের ময়দান’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, কপালে যা-ই আছে ভোটের মাঠে থাকবেন তিনি।

বিপরীতে বেলা ৩টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোননী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ ছিলেন নিশ্চুপ।

হিসাব বলছে ভোটারদের সময় এখন। গত ১৭ দিনের তুলনায় নগরী আজ অচেনা হলেও চলছে সব স্বাভাবিক কার্যক্রম।

রোববার সকাল থেকে শুরু হবে ভোট। একটানা চলবে ৪টা পর্যন্ত। এর মধ্যেই ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নগরীর মূল শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং বন্দর থেকে ১৯২টি কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম।

প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। ৩০টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।

ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো, পরিবেশও সন্তোষজনক আছে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো নিয়োজিত আছেই। পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স, টহল বাহিনী, সবই থাকবে। র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সবাই থাকবেন।’

ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, এ জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানালেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ করে ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে রোববার নগরীর ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ।

পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম, ‘আমি বলতে চাই, কোনো বহিরাগতকে আমরা আগামীকাল নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। কালকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।’

এ বিভাগের আরো খবর