বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের শঙ্কা

  •    
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩০

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সি সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কখনও সহিংসতার নির্বাচন চাই না। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার কারণে প্রাণহানি ঘটছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যারা মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন, তাদের নিয়ে না থাকলেও কাউন্সিলরদের নিয়ে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। কারণ অতীতে আমরা দেখেছি, যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি করেছেন।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন নাগরিক কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করছেন তাদের অনেকে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত। এ অবস্থায় ভোটে জিততে তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে, যা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে সহিংসতা।

পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের দাবি, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তারা নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে, বাড়িয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এরই মধ্যে যারা আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

রাত পোহালেই তৃতীয়বারের মতো ভোট হবে রাজধানী লাগোয়া এই সিটিতে। মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির হাতঘড়ি প্রতীকের রাশেদ ফেরদৌস, খেলাফত মজলিসের দেয়ালঘড়ি প্রতীকের এ বি এম সিরাজুল মামুন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকের জসীমউদ্দীন ও ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তাদের বাইরে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৩২ জন।

পুলিশ বলছে, যেসব সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন তাদের মধ্যে কারো কারো নামে চুরি, মারামারি, চাঁদাবাজি ও মাদক আইনে মামলা আছে। অতীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে এমন ব্যক্তিরাও আছেন। বিভিন্ন মামলায় জেল খেটে জামিনে আছেন কেউ কেউ।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সি সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কখনও সহিংসতার নির্বাচন চাই না। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার কারণে প্রাণহানি ঘটছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যারা মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন তাদের নিয়ে না থাকলেও কাউন্সিলরদের নিয়ে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। কারণ অতীতে আমরা দেখেছি, যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি করেছেন।’

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নুরুউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করতে মারামারি, হানাহানিসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে জন্য প্রার্থীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’

পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি, গোয়েন্দা ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি করবে। তবুও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো প্রার্থী যদি সহিংসতায় জড়াতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন মামলার আসামি এবং অতীতে সংঘাতে জড়িয়েছে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ আমরা শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার নিউজবাংলাকে জানান, ‘নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যাতে সহিংসতায় জড়াতে না পারে সে জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে থাকবেন। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির দাবিগুলো লিখিত আকারে পেলে আমরা বিষয়গুলো দেখব।’

ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা জানান, ইতিমধ্যে যেসব প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ১৪৮ জন। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৩টিতে আছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সংঘাতের শঙ্কা।

ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়

নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে আছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান। এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিমও।

২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রধান দুই প্রার্থী ইকবাল হোসেন ও আমিনুল হক রাজু। জেলা বিএনপির সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক ইকবাল বর্তমান কাউন্সিলর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমিনুল হক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শাহজালাল বাদল। সাত খুন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা বাদল। তার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে আছেন যুবলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে আরিফুল হক হাসান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ছোট ভাই নুর উদ্দিন মিয়া। তা ছাড়া নজরুল ইসলাম নামের আরেক প্রার্থী আছেন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই হবে শামীম ওসমানের দুই ঘনিষ্ঠ মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের মধ্যে। তাদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান। এই দুই প্রার্থীর লোকজন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন একাধিকবার।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লার সঙ্গে ভোটের লড়াই হবে মহসিন ভুঁইয়ার।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জমসের আলী ঝন্টুর ছেলে শাহাদাত হোসেন বাবুর সঙ্গে লড়বে বিএনপির নেতা অহিদুল ইসলাম ছক্কু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগপন্থী সাইফুল হাসান রিয়েল।

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের অসিত বরণ বিশ্বাসের সঙ্গে লড়ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জি এম আরমান।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইনের সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার। তাদের মধ্যে একটি মসজিদের হিসাব নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ফয়সাল সাগরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ গাউসিয়া কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমান চৌধুরীর।

২০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির গোলাম নবী মুরাদের সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ শাহেন শাহর।

২২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির সুলতান আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে লড়াই হবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদের। সেখানে মহিলা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশরাত জাহান খান স্মৃতিও লড়ছেন।

২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ। তার সঙ্গে লড়ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর সভাপতি আবুল কাউসার আশা।

এ বিভাগের আরো খবর