আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার ডেথ রেফারেন্স বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের তালিকায় মামলাটি রাখা হয়েছে।
এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা শবনম মুস্তারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি আমাদের কোর্টের এক নম্বর তালিকায় আছে। আগামীকাল রোববার শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আদালতে উপস্থাপন করব। পরে আদালত যখন চাইবেন, তখন শুনানি হবে।’
এদিকে আলোচিত মামলাগুলো শিগগির শুনানি হবে- এমন আশা প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের পর আশা করি অচিরেই দুটি বেঞ্চ হবে, তখন মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিডিআর হত্যা মামলাসহ আলোচিত মামলা উপস্থাপনের পর শুনানি হবে।’
এরই মধ্যে আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। তাই মামলাটিও কার্যতালিকায় স্থান পেয়েছে।
আলোচিত এই মামলায় চট্টগ্রামের বিচারিক আদালত ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি রায় দেয়। পরে মামলাটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিচারের জন্য উঠলেও ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ মামলায় চট্টগ্রামের বিচারিক আদালতে মামলাসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে শুনানি নিয়েছিলেন জানিয়ে এটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে চলে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলে নতুন করে প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০টি ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা করা হয়। সিআইডি পুলিশ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। এর বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়।
দীর্ঘদিন বিচারিকপ্রক্রিয়া শেষে দুটি মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পরে একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় করা দুই মামলায় বিচারিক আদালতের ৫১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর এই মামলা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে।
বিচারিক আদালত রায়ে পৃথক দুই মামলায় ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
বাবর, নিজামী ও পরেশ বড়ুয়া ছাড়া ফাঁসির দণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন, অস্ত্র বহনকারী ট্রলারের মালিক হাজি সোবহান, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান এবং অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ। এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন এখনও পলাতক।