নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ করে ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে রোববার নগরীর ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ।
শহরের পুলিশ লাইনসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে নির্বাচনি ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, কোনো বহিরাগতকে আমরা আগামীকাল নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। কালকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।’
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৫ হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, ‘কেউ যেন নির্বাচনের উৎসব, আমেজ বিনষ্ট করার চেষ্টা না করে। কোনো ধরনের দুষ্কৃতকারী, অতি উৎসাহীমহল যদি ভোটকেন্দ্রে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে কোনো পাড়া-মহল্লায় কোনো অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করে তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের উদ্দেশ করে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ‘কোনো ধরনের ছাড় আমরা দেব না। কাউকে কোনো ধরনের অরাজকতা করতে দেব না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে, থাকবে।’
সাধারণ ভোটাররা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারবেন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কোনো বাধা-বিপত্তি থাকবে না। কেউ বাধা দিতে এলে আমরা প্রতিহত করব।’
সার্বিক সহযোগিতায় কোনো ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই প্রচারণা শেষ হয়েছে বলেও দাবি করেন জায়েদুল আলম।
তিনি জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, এপিবিএন ও র্যাব কাজ করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি কাজ করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম থাকবে সবগুলো বাহিনীর। নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও পাড়া-মহল্লাকে নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসব।’
নির্বাচনে সাতজন মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের দিন সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলেন এসপি জায়েদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘তারা সবাই সহযোগিতা করবেন বলেছেন। কারও প্রার্থীকে কিংবা নির্বাচনে কোনো দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠীর পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করছি না। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোট উপলক্ষে শুক্রবার শেষ হয়েছে ১৭ দিনের বিরামহীন প্রচারণা। এবার ভোটের অপেক্ষা। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে একটানা ভোটগ্রহণ। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। পাঁচ বছরের জন্য নতুন নগরপিতা পাবে নারায়ণগঞ্জ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট সাতজন প্রার্থী। আর ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১৪৮ জন। আর ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৩২।
নির্বাচনের মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৯২টি। আর ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন, যাদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, আর নারী ভোটার আছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন।
১৯২টি কেন্দ্রের সব কটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সকালে শুরু হবে নারায়গঞ্জের জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ।
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে স্বস্তিতে আছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ইভিএম প্রচার চলেছে সারা দিন। ছিল মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা। আগামীকাল (শনিবার) আমাদের কেন্দ্রে সরঞ্জাম যাবে। তার আগে প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি ব্রিফিং করা হবে। পুলিশ লাইনসে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি ব্রিফিং হবে। তারপর তারা মালামাল নিয়ে কেন্দ্রে চলে যাবে। সব প্রস্তুতি কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’
১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে কাজ করছেন মোট ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। থাকছে বিজিবির টহল।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম শুক্রবার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তিনটি থানা এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩০টি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’
মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা যেমন থাকবেন, তেমনি প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজিবির টিম মোতায়েন থাকবে।’
নির্বাচন ঘিরে কোনো প্রার্থীর নেতাকর্মী বা সমর্থকদের গ্রেপ্তার বা কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি বলেও জানান জায়েদুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এবং যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, শুধু তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে অথবা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’