সকাল সকাল কোদাল হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন কৃষকরা। ইরি-বোরোর বীজতলা তৈরির কাজ শেষ। তাই চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে।
ধান উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলাটি। কৃষকরা আমন ধানের ভালো দাম পাওয়ায় শীত উপেক্ষা করেই শুরু করেছেন ইরি-বোরো ধানের আবাদ।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র বলছে, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় গত মৌসুমে এ জেলার কৃষকরা ৯২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছিল, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। দামও পেয়েছে বেশ ভালো। ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার ৯০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কৃষকরা এ মৌসুমে কোনো জমি পতিত না রেখে ইরি-বোরোর আবাদ করবেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুরের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা এবার আমন ধানের দাম বালা পাইছি। তাই আগেবাগেই ইরি-বোরো ধানের চাষ শুরু করছি।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের কৃষক নুর হোসেন বলেন, ‘আমরা এবার কোনো জায়গা খালি রাখুম না। ধানের দাম বালা পাইছি।’
ঝিনাইগাতী উপজেলার বগাডুবী এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল আইসা ফসল নষ্ট করে, তাই আমরা আগাম জাতের ইরি-বোরো ধানের আবাদ করতাছি। যাতে বর্ষা আসার আগেই ধান কাটবার পাই।’
এদিকে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ শুরু হওয়ার পর থেকে কৃষি শ্রমিকদের কদরও বেড়েছে।
জেলার সদর উপজেলার বাজিতখিলার কৃষি শ্রমিক শুকুর আলী বলেন, ‘আমরা খুব চাপে আছি। একেক দিন দু-তিনজন করে আমাগরে কামলা নিবার চায়। আমরা তহন বিপদে পড়ে যাই। একজনের কাছেই তো আমাগোরে আওন নাগে।’
আরেক শ্রমিক করিম মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন তো বয়ে থাকলাম। এহন তো আমাগোরে খুব কদর। এহন আমরা পাঁচ-ছয় শ টেহা দিন হাজিরা কাম করি।’
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মুহিত কুমার দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো দুর্যোগ না থাকায় জেলায় যেমন এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছিল, তেমনি ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। কৃষকদেরও প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ইরি-বোরোর আবাদ করবেন। আমরা কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের লোকজন সব সময় কৃষকদের পাশে আছে।’