বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রচার শেষে এবার ভোটের পালা

  •    
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:৪১

শেষ দিনেও দারুণ ব্যস্ত সময় পার করেছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সম্ভাবনা আর উন্নয়নকাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন আইভী ও তৈমূর। নির্বাচন ঘিরে কিছু শঙ্কার কথা জানালেও জয়ের ব্যাপারে দুজনই শতভাগ আশাবাদী।

শেষ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রচার। টানা ১৭ দিনের বিরামহীন প্রচার শেষে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ফিরে গেছেন ঘরে। এখন ভোটের অপেক্ষা। ৩২ ঘণ্টা পর রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে একটানা ভোটগ্রহণ। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের।

ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবে এই শহরের নগরপিতা। যিনি আগামী ৫ বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের নেতৃত্ব দেবেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট সাতজন প্রার্থী। আর ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১৪৮ জন। আর ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৩২।

তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেয়র পদ ঘিরে। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টানা দুইবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।

শেষ দিনেও দারুণ ব্যস্ত সময় পার করেছেন এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সম্ভাবনা আর উন্নয়নকাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন তারা।

নির্বাচন ঘিরে কিছু শঙ্কার কথা জানালেও জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী দুই প্রার্থী। আইভী তো বলেই দিয়েছেন সুষ্ঠু ভোট হলে লক্ষাধিক ভোটে জয় পাবেন তিনি। আর তৈমূর জানালেন জনজোয়ার বলে দিচ্ছে তার জয়।

জীবন বাজি রেখে ‘খেদমত’ করতে চান আইভী

শেষ বিকেলে নির্বাচনি পথসভায় অংশ নেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনে নৌকা ঠেকানোর সাধ্য কারও নেই বলে দাবি করেন তিনি।

আইভী শেষ দিনের প্রচারে এসে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এবং পরে দুই মেয়াদের সিটি মেয়র হিসেবে তার করা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আরও পাঁচ বছরের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে ‘খেদমত’ করার সুযোগ চান।

বিকেলে শহরের ২ নম্বর রেলগেট মোড়ের ওই পথসভায় নৌকা মার্কার প্রার্থী বলেন, ‘পুনরায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে আমি বলব, আমাকে আপনারা পাঁচ বছরের জন্য খেদমত করার সুযোগ দিন। আমি আমার বাবার মতো আপনাদের খেদমত করতে জীবনকে বাজি রেখেছি। যে কোনো সময় আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটতে পারে। আমি আপনাদের জন্য মৃত্যুকেও বরণ করে নিতে রাজি আছি।’

নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন জানিয়ে আইভী বলেন, ‘নিজের ঘর-সংসারের দিকে তাকাইনি। এসেছি আপনাদের সেবা করতে। নিশ্চয় আপনারা আমাকে বিমুখ করবেন না।’

তার আমলে নারায়ণগঞ্জের আনাচকানাচে উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে ভোটারদের কাছে টানতে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় এই ধারাবাহিকতা আপনারা বজায় রাখবেন। নারায়ণগঞ্জে সুন্দর নগরী গড়ার জন্য, শিশুবান্ধব নগরী গড়ার জন্য, শীতলক্ষ্যা ব্রিজ করার জন্য, পরিবেশবান্ধব নগর গড়ার জন্য নিশ্চয়ই আপনারা আমাকে ভোট দেবেন।’

রক্ত দিয়ে হলেও নির্বাচনে থাকবেন তৈমূর

প্রচারে অংশ নিয়ে কম যাননি হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। এক দশক আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ালেও এবার আর এমনটি হচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।

শেষ দিনের প্রচারে বন্দর এলাকায় পথসভায় তিনি বলেন, ‘আমি রক্ত দিয়ে হলেও নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব। কারণ আমি কোনো দলের প্রার্থী নই।’

তৈমূর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্ত্যবের পর থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ গ্রেপ্তারে আমরা শঙ্কিত, তবে আমরা মনে করি আমাদের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা নির্বাচনে থাকব।’

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এই নেতার বিশ্বাস এবার তিনি জয় পেতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘একটা জনজোয়ার সৃষ্টি হইছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ করের বোঝা বহন করতে চায় না। মানুষ সিটি করপোরেশন থেকে যে সেবা চায়, তা পায়নি। এ কারণে মানুষ পরিবর্তন চায়।’

অবশ্য রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের নিজ বাসায় ডাকেন তৈমূর আলম খন্দকার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, কার স্বার্থে, কেন সিটিটিভি খুলে নেয়া হচ্ছে তা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের দেখা উচিত।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

নির্বাচনের মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯২টি। আর ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন, যাদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, আর নারী ভোটার আছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন।

১৯২টি কেন্দ্রের সব কটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সকালে শুরু হবে নারায়গঞ্জের জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ।

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে স্বস্তিতে আছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ইভিএম প্রচার চলেছে সারা দিন। ছিল মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা। আগামীকাল (শনিবার) আমাদের কেন্দ্রে সরঞ্জাম যাবে। তার আগে প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি ব্রিফিং করা হবে। পুলিশ লাইনসে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি ব্রিফিং হবে। তারপর তারা মালামাল নিয়ে কেন্দ্রে চলে যাবে। সব প্রস্তুতি কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’

১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সব ভোটকেন্দ্র সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব কয়টি কেন্দ্রের দিকে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছি।’

আইনশৃঙ্খলা প্রস্তুতি

নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে কাজ করছেন মোট ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। থাকছে বিজিবির টহল।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তিনটি থানা এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩০টি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা যেমন থাকবেন, তেমনি প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজিবির টিম মোতায়েন থাকবে।’

নির্বাচন ঘিরে কোনো প্রার্থীর নেতাকর্মী বা সমর্থকদের গ্রেপ্তার বা কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি বলেও জানান জায়েদুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এবং যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, শুধু তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে অথবা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর