গাজীপুরের কালিগঞ্জের বড়গাঁও গ্রামের জামাই জাকির হোসেন। পৌষ সংক্রান্তিতে শুক্রবার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাবেন বলে জামাই মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে।
অনেক স্টল ঘুরে শেষ পর্যন্ত ১৪ হাজার টাকায় একটি আইড় মাছ কিনে রওনা দেন জাকির। বলেন, ‘প্রতিবছরই মেলায় মাছ কিনতে আসি। শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা, তাই এলাকার সব জামাইদের নজর এখন বিনিরাইলের মাছের মেলার দিকে।’
নাম জামাই মেলা হলেও এটি মূলত মাছের হাট। কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়নের বিনিরাইল গ্রামে এই মেলা বসে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে। এলাকায় প্রচলিত আছে, এ দিন জামাইরা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাবেন শ্বশুরবাড়িতে। আবার জামাই আপ্যায়নে শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এই মেলা থেকেই মাছ কিনবেন। মাছ নিয়ে মোটামুটি জামাই-শ্বশুরের মধ্যে প্রতিযোগিতাই চলে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুইশ বছর ধরে এই মেলা চলে আসছে। মেলা ঘিরে জামাই-শ্বশুরদের মাছ কেনার দৌঁড়ঝাপের কারণে এটি জামাই মেলা নামেই পরিচিত পেয়েছে।
সরেজমিনে শুক্রবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, সহস্রাধিক দোকানে নানা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন তারা। তাদের সংগ্রহে আছে চিতল, কাতল, রুই, বাগাড়, আইড়, বোয়াল, শাপলা পাতা, কোরাল, সামুদ্রিক কাইক্কা, গলদা চিংড়ি ও রূপচাঁদা। আছে নানা জাতের দেশী মাছও।
হাঁক-ডাক দিয়ে নানাভাবে ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বিক্রেতা।
১৫০ কেজি ওজনের একটি ও ১২০ কেজি ওজনের দুটি শাপলাপাতা মাছ নিয়ে বসেছেন রাজন মিয়া।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই মেলা উপলক্ষে সপ্তাহখানেক ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করি। এবারও মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ এনেছি আমি। মেলায় মাছ বিক্রির পাশাপাশি এই উৎসবে আমরাও আনন্দ করি।
‘যেহেতু মাছের আকৃতি অনেক বড়, তাই কেউ একা এই মাছ কিনতে পারে না। প্রতি কেজি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’
মেঘনা নদীর ৩০ কেজির কাতল মাছ নিয়ে এসেছেন নরসিংদীর রঞ্জিত চন্দ্র বর্মন।
তিনি বলেন, ‘কাইক্কা, আইড়, বাগাড়, কোরাল, বোয়ালসহ বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেছি মেলা উপলক্ষে। ২৭ কেজির একটা বাগাড় মাছ এনেছি। ৩০ হাজার টাকা দাম উঠলেই বিক্রি করব।’
স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন নিগার সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ইউটিউব-ফেসবুকে এই জামাই মেলার কথা প্রচুর শুনেছি। আমার স্বামী কালিগঞ্জে চাকরি করায় এবারই প্রথম মেলায় আসা হয়েছে। মাছের দাম কিছুটা বেশি হলেও মেলায় ঘুরতে এসে ভালো লাগছে।’
দিনব্যাপী এই মেলা মাছকেন্দ্রিক হলেও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে বসে নানা পণ্যের স্টল। সেগুলোও দিনভর ছিল জমজমাট।
জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম জানান, এই মেলা ঐতিহ্যকে বহন করে আসছে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে। এ বছরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কিশোর আকন্দ জানান, এটি কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের মেয়ের জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে আসেন। এখনও সেই প্রচলন আছে।