নিজেকে আড়াল করতে বাউলের ছদ্মবেশ ধারণ করা বগুড়ার একাধিক হত্যা মামলার আসামি হেলাল হোসেনকে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
হেলালকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করে র্যাব-১২। পরে বগুড়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নিষ্কৃতি হাগিদকের আদালতে তাকে হাজির করা হয়।
আদালত পরিদর্শক সুব্রত কুমার জানান, আদালত হেলালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে তাকে প্রথমে ওই আদালতের দোতলার হাজতখানায় নেয়া হয়। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করতে যান ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম শিমুল, মা বিলকিস বেওয়াসহ নিকটাত্মীয়রা।
বাবাকে দেখতে আসা হেলালের ছেলে শিমুল জানান, তার জন্ম ২০০২ সালের এপ্রিলে। ৮-৯ বছর বয়সে শেষবার তিনি বাবাকে দেখেছিলেন।
কারাগারে পাঠানোর আগে বাবাকে দেখার জন্য হাজতখানার বারান্দায় অপেক্ষমাণ শিমুল বলেন, ‘আব্বাকে এখনও সরাসরি দেখিনি। এ কয়দিন শুধু টেলিভিশনেই তাকে দেখেছি। আব্বার কোনো স্মৃতিও আমার কাছে নেই।’
বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার বাসিন্দা হেলাল। তার মা বিলকিস বেওয়া জানান, বহু বছর হলো ছেলের সঙ্গে তার কোনো দেখা নেই। সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে সেটিও তিনি মনে করতে পারছেন না।
বিলকিস আরও জানান, তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হেলাল দ্বিতীয়।
হাজতখানায় সাংবাদিক পরিচয় দিলে হেলাল দাবি করেন, ২০১৫ সালে তিনি চুরির একটি মামলায় জামিন নিয়ে বগুড়া ছেড়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কাজ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হেলাল আরও দাবি করেন, মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ হত্যা মামলা ছাড়া তার আর কোনো মামলা নেই।
এ সময় তিনি বলে ওঠেন, ‘আমার মাথা ঠিক নেই। আপনি চলে যান। আমার ছেলে ও মাসহ আত্মীয়স্বজন এসেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনটি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম।
নিজেকে আড়াল করতে বছরের পর বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন হেলাল। গত বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, ‘হেলালের বিরুদ্ধে যে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে, সবগুলোই বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। তিনি বগুড়ায় একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০১ সালে বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হেলাল। এ ছাড়া ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন তিনি।
২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখনও তার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে সংঘটিত বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচার চলছিল।
২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে বাম হাত পঙ্গু হয়ে যায় হেলালের। এর পর থেকে তিনি এলাকায় হাত লুলা হেলাল নামেও পরিচিত ছিলেন।
চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান হেলাল। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যান। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর ছদ্মবেশে সিলেটে কিছুদিন অবস্থান করেন।
নাম-পরিচয় গোপন রেখে বেশির ভাগ সময়ই বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন হেলাল। প্রায় সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করেন। চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছেন হেলাল। রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
বগুড়া কারাগারের জেলার এস এম মহিউদ্দীন হায়দার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় হেলালকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।