বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শামীম ইস্যুতে কৌশলী আইভী

  •    
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:১৬

প্রচারের শেষ সময়ে এসে সরাসরি শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য না দেয়াকে আইভীর ভোটের কৌশল হিসেবে দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, নৌকার প্রার্থীর এমন বক্তব্য প্রমাণ করে যে তিনি জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার।

ভোটের মাত্র দুদিন বাকি। প্রচারের শেষ দিনে শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ নগরের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারে নেমে শুরু থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে এসেছেন এই নৌকার প্রার্থী। শুক্রবার সকালের মতবিনিময়েও তাকে এ সম্পর্কিত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে প্রচারের শেষ দিনে এসে সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের কৌশলী জবাব দিয়েছেন তিনি।

প্রচারের শেষ সময়ে এসে সরাসরি শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য না দেয়াকে আইভীর ভোটের কৌশল হিসেবে দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, নৌকার প্রার্থীর এমন বক্তব্য প্রমাণ করে যে তিনি জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার।

আইভী বলেন, ‘একটি পক্ষ সহিংসতা চাচ্ছে। কারণ সহিংসতা হলে আমার ভোটাররা ভয় পেয়ে ভোট দিতে আসবে না।’

কারা সহিংসতা চাচ্ছে- আপনার ঘরের নাকি ভোটের মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ? জবাবে আইভী বলেন, ‘যারা বাধা দেয় বা সহিংসতা করে তারা একটা সময়ে এক হয়ে যায়। তা ঘরের পক্ষ বা প্রতিপক্ষ যে-ই হোক। এখানে নির্বাচনটা হচ্ছে আইভী বনাম অনেক কিছু। তাই অনেক পক্ষই হতে পারে।’

মতবিনিময় শেষে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, এখনও শামীম ওসমানকে নিয়ে কোনো অভিযোগ আছে কি না এবং শামীম অনুসারীরা তার পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছেন কি না? দুই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে জানান আইভী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেয়া এবং বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে- নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের। অনেকের ধারণা ছিল, তৈমূরকে পেছন থেকে শক্তি জোগাচ্ছে ওসমান পরিবার। প্রতীক বরাদ্দের পর আইভীকে উদ্দেশ করে তৈমূরের আক্রমণাত্মক বক্তব্য, উল্টোদিকে সরকারের প্রতি নমনীয় কণ্ঠস্বর ওই গুঞ্জন আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

আইভীও অভিযোগ তোলেন- শামীম ওসমানের ওপর ভর করে নির্বাচনে জিততে চাইছেন তৈমূর।

এরপর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তোড়জোড়। কেন্দ্রের চাপে শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে আইভীর পক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা দেন। এরপর আইভীর পক্ষে শামীম সমর্থকদের মাঠে নামতেও দেখা যায়।

গুঞ্জন আর আইভীর অভিযোগ কতটা সঠিক, তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ ভোটাররা জানান, ওসমান পরিবারের সঙ্গে তৈমূর আলম খন্দকার ও তার সমর্থকদের সখ্য রয়েছে। তাদের নিয়মিতই একসঙ্গে দেখা যায়। সে জন্য নারায়ণগঞ্জবাসী এই গুঞ্জন বিশ্বাস করে।

তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, এটি নিছক ধারণা নয়; এতে সত্যতা রয়েছে। কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে- ওসমান পরিবার আইভীকে মেয়র হিসেবে চায় না। তাই শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই সেলিম ওসমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈমূর আলম খন্দকার তার দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তৈমূরের নির্বাচনে অর্থায়ন করছেন সেলিম ওসমান। আর শামীম জোগান দিচ্ছেন পেশিশক্তি।

গোয়েন্দাদের এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা শামীমকে থামানোর দায়িত্ব নেন। সূত্রটি নিশ্চত করেছে, দলীয় চাপে পড়েই শামীম সংবাদ সম্মেলন করে আইভীকে সমর্থন করার কথা জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানায়, শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে আইভীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও দৃশ্যত তার অনুসারীরা আইভীর প্রচারে অংশ নিচ্ছিল না। সে জন্য মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শুধু তা-ই নয়, মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের বাসায় গিয়ে চাপ দেয় প্রশাসন। এর পর থেকে তারা আইভীর পক্ষে নামমাত্র প্রচারে নামে।

নিউজবাংলাকে একই ধরনের তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা। তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ মানেই ওসমান পরিবারের রাজত্ব। তারা কোনো দলের জন্য রাজনীতি করে না; বরং নিজেদের জন্য রাজনীতিকে ব্যবহার করে। একইভাবে বিএনপির কিছু নেতা নিজ স্বার্থের জন্য ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় চলে। ওসমান পরিবার যেকোনো মূল্যে আইভীকে সরিয়ে সিটি করপোরেশনে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

পুরো নারায়ণগঞ্জ ওসমান পরিবারের হাতে থাকলেও সিটি করপোরেশন হাতছাড়া। তাই এবার তৈমূরকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপে পড়ে ওসমান পরিবার সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা অবশ্য শামীম ওসমানকে নিষ্ক্রিয় করেই থেমে থাকেননি। তারা নিয়মিত আইভীর প্রচারে অংশ নেন। কিন্তু আইভিপন্থি নেতাদের অভিযোগ, শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলনে আইভীকে সমর্থনের কথা জানালেও তার অনুসারীরা চাপে পড়ে আইভীর পক্ষে দায়সারা প্রচারে অংশ নেয়।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি পুরো নির্বাচনি প্রচারে আইভী আপার সঙ্গে থেকেছি। শামীম ওসমানপন্থিদের কখনই আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে দেখিনি। কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে এলেই কেবল তারা রাস্তায় বের হতো।’

সদ্য বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আইভী আপার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ওপর কোনো চাপ ছিল না।’

তাহলে কমিটি কেন বিলুপ্ত করা হলো এবং আপনার বাসায় পুলিশ কেন গিয়েছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে রিয়াদ বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তাই বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর আমার বাসায় পুলিশ গিয়েছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে পুলিশ বাসায় গিয়েছিল।’

আপনারা আইভীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রচার চালাচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে তার জন্য ভোট চাচ্ছি। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সব প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘শামীম ওসমান সংবাদ সম্মলন করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি আগে আইভীর পক্ষে ছিলেন না। এটা স্পষ্ট যে দলীয় চাপে পড়ে শামীম ওসমান থেমেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা আইভীর প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। শামীম ওসমানকে এক রকম হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। নৌকার ভরাডুবি হলে তার দায় নিতে হবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে নানা স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন আইভির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘বহিরাগতরা এসে নৌকার প্রার্থীর প্রচার চালাচ্ছে ও নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করতে চাইছে।‘

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইভী বলেন, ‘বহিরাগতরা এসে তার পক্ষে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্ট করছে এমন কিছু তার জানা নেই। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আসেন নির্বাচনি পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রভাবিত করতে চায় না। আমরা নারায়ণগঞ্জে যাই আমাদের প্রার্থীর প্রচারের জন্য ও নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে।’

এ বিভাগের আরো খবর