বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটে ‘ডাকলেন’ ফখরুল, বহিষ্কার করছেন রিজভী

  •    
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:০৩

গত ২ নভেম্বর মির্জা ফখরুলের স্পষ্ট ঘোষণা ছিল- স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে ভোটে অংশ নেয়ায় দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের আদেশ জারি করেছেন। দুই নেতার দুই ধরনের অবস্থান কেন- এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা আছে বিএনপির। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কেউ অংশ নিতে পারবে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যত উৎসাহ দিয়েছেন তৃণমূলের ভোটে। এই ঘোষণার পর তিনটি ধাপে বিএনপির ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা চমক জাগানো ফলও করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে ভোটে দাঁড়ানোয় বেশ কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে দলীয় আদেশ জারি করেছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির দুই নেতা মির্জা ফখরুল ও রিজভীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে এই ঘটনাটি বিএনপিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।

গত বছর পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন এলাকায় ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে আর ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের তৃতীয় ধাপে এসে স্পষ্ট হয়, বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে সরে নেই।

গত ২ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন মির্জা ফখরুল। সেদিন তিনি যা বলেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে বিএনপি এই ভোটে না থেকেও আছে।

বিএনপি মহাসচিবের যেদিন বক্তব্যটা ছিল এমন- ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই: মির্জা ফখরুল

এই বক্তব্যের পর গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির ৯৬ নেতা-কর্মী, ২৮ ডিসেম্বরের চতুর্থ ধাপের ভোটে ৯৮ জন আর ৫ জানুয়ারির পঞ্চম ধাপের ভোটে ৮৩ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থী হন স্বতন্ত্র পরিচয়ে। এই নির্বাচনে দলটির আরও দুই নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও তৈমূরের পক্ষে তা প্রত্যাহার করে নেন। সে সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ইউনিয়ন পরিষদের মতোই স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপি অংশ নিচ্ছে রাজধানী-লাগোয়া জনপদটিতে।

তবে এই পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে আর নারায়ণগঞ্জে ভোটের প্রচার চলাকালে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পদচ্যুতি ও বহিষ্কারের বেশ কয়েকটি আদেশ জারি করেন।

দেখুন, আমার জানা নেই মহাসচিব ঠিক কী বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় তিনি এটা বলতে চেয়েছেন যে, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এখন একজন তো দলের পদে থেকে হাঁস মার্কায় নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি নির্বাচন করুক। সেটার ওয়েটাই তো এটা। যে দলীয় কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে সেটা করতে হবে। স্বাধীনভাবে: রুহুল কবির রিজভী

প্রথমে তৈমূরের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়কের, পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ এবং পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবী সমিতির পদ কেড়ে নেয়া হয় তৈমূরের। বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে এও জানিয়ে দেয়া হয় যে, নারায়ণগঞ্জে তাদের কোনো প্রার্থী নেই।

নারায়ণগঞ্জে ভোটের প্রচার চলাকালে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পদচ্যুতি ও বহিষ্কারের বেশ কয়েকটি আদেশ জারি করেন। প্রথমে তৈমূরের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়কের, পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ এবং পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবী সমিতির পদ কেড়ে নেয়া হয় তৈমূরের। ফাইল ছবি

তৈমূরের পাশাপাশি তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দল থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়। অবশ্য এমন আদেশের পরেও বিএনপির কোনো নেতা ভোট থেকে সরেছেন, এমন উদাহরণ নেই।

মির্জা ফখরুল যেখানে বলেছেন, স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে অংশ নিলে বিএনপির কোনো বাধা নেই, সেখানে কেন এই ‘অপরাধে’ রিজভী নেতাদেরকে বহিষ্কার করছেন?

রিজভীর কাছেই প্রশ্ন রাখে নিউজবাংলা। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো আর একার সিদ্ধান্ত না। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আমার তো কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই যে আমার কাউকে পছন্দ হলোনা তাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলাম। তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, সেই প্রেক্ষিতে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি দলীয়ভাবে জানিয়েছে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। এটা তো আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখন কেউ যদি সেই সিদ্ধান্ত না মানেন, তার প্রতি তো দল অ্যাকশন নেবেই। সেই অ্যাকশন না নিলে তো দলকে সুসংগঠিত করা যাবে না। আর দল তার নীতিগত জায়গা থেকে যে অ্যাকশন নিচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার কী আছে বুঝলাম না।’

এমন বক্তব্যের পর ভোট নিয়ে মির্জা ফখরুলের সেই বক্তব্য তুলে ধরে রিজভীর কাছে নিউজবাংলা প্রশ্ন রাখে, মহাসচিব এমন ঘোষণা দেয়ার পর বহিষ্কারের এই আদেশ কীভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত হয়?

জবাবে রিজভী বলেন, ‘দেখুন, আমার জানা নেই মহাসচিব ঠিক কী বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় তিনি এটা বলতে চেয়েছেন যে, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এখন একজন তো দলের পদে থেকে হাঁস মার্কাতে নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি নির্বাচন করুক। সেটার ওয়েটাই তো এটা। যে দলীয় কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে সেটা করতে হবে। স্বাধীনভাবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, মির্জা ফখরুলের সেই বক্তব্য গণমাধ্যমে সঠিকভাবে আসেনি। তিনি বলেন, ‘মহাসচিবের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

সেটি কীভাবে বুঝলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র বলতে আমরা কী বুঝি? যে কোনো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন না। এখন কেউ বুকে ধানের শীষ বুকে নিয়ে যদি বলেন, ‘আমি ফুটবল মার্কায় নির্বাচন করব’, সে ক্ষেত্রে তো তিনি বুকে ধানের শীষ নিয়ে ঘুরতে পারেন না।

“দল যখন বলেছে নির্বাচনে যাচ্ছি না, সেখানে কেউ সেই সিদ্ধান্ত না মানলে সেটাকে নিয়ম ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। আর যে নিয়ম ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”

বহিষ্কার ও অব্যাহতির কিছু সিদ্ধান্ত

গত ৯ জানুয়ারি নাটোর জেলা বিএনপির তিন নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করেন রুহুল কবির রিজভী। সেই তিন নেতা আগামী ১৬ জানুয়ারি জেলার তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।

তারা হলেন, নাটোর পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ এমদাদুল হক আল মামুন (তিনি ছিলেন নাটোর পৌর বিএনপির সভাপতি), বাগাতিপাড়া পৌরসভার শরিফুল ইসলাম লেলিন (তিনি ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক) একই পৌরসভায় আরেক প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জামাল (তিনি ছিলেন বাগাতিপাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক)

গত ২ জানুয়ারি রিজভী স্বাক্ষরিত আরও একটি চিঠিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের পদ থেকে তৈমূর আলম খন্দকারকে প্রত্যাহার করার কথা জানানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর