দুবাইগামী যাত্রী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়।
বিদেশ যাওয়ার আগের দিন গত ৭ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রামের হালিশহরে সরকার নির্ধারিত শেভরন কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং সেন্টারে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন তিনি।
সেদিন সন্ধ্যায়ই রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও বিকেলে ০১৭৭০৯১০৯৬৪ নাম্বার থেকে কল আসে গিয়াসের মোবাইলে। শেভরনের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। নেগেটিভ ফল চাইলে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিকাশে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর টাকা দিলেই সন্ধ্যায় মিলবে রিপোর্ট। একই সঙ্গে তা স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
পরদিনই ফ্লাইট। তাই নিরূপায় হয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশ করেন গিয়াস। পরে সন্ধ্যা ৭টার পর আসে কাঙ্ক্ষিত সেই রিপোর্ট। যেখানে গিয়াসের রিপোর্ট নেগেটিভ উল্লেখ করা হয়।
আসলেই কি পজিটিভ ছিলেন গিয়াস, নাকি প্রতারিত হয়ে টাকা খুইয়েছেন?
খোঁজ নিয়ে শুধু গিয়াসের ঘটনাই নয়, শেভরন ল্যাবের নাম ভাঙিয়ে এর আগেও এমন আরও বেশ কিছু ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। কিছু ঘটনায় অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে অভিযোগ আছে।
এ ধরনের ঘটনায় গত বছর শেভরন কর্তৃপক্ষ হালিশহর থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও কোনো প্রতারক চক্রের হদিস মেলেনি।
বর্তমানে চট্টগ্রামে শেভরন ছাড়াও বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার অনুমতি রয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের। এগুলো হলো চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল সেন্টার। এ ছাড়া সরকারিভাবে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ল্যাবসংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবের কারও মাধ্যমেই যাত্রীদের তথ্য প্রতারকদের কাছে চলে যাচ্ছে। এসব তথ্য ব্যবহার করেই প্রতারকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ল্যাবসংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের পর তা টেস্ট করা হয় আরটি-পিসিআর মেশিনে। পরবর্তী ধাপে প্রাপ্ত ফলাফলসহ যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য ডিজি হেলথের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হয়।
তবে ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য দেশের প্রতিটি ল্যাব আলাদা ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। ডিজি হেলথের ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর ল্যাবগুলো নিজেদের তথ্য আপলোড করতে পারে। পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন ল্যাবে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার সব তথ্য সেখানে দেখা যায়। ফলে নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া বিদেশগামী যেকোনো যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য সহজেই পাচার হয়ে যায়।
এদিকে বিদেশগামী যাত্রীদের প্রতারিত হওয়ার বেশির ভাগ ঘটনায় শেভরন ল্যাবের নাম যুক্ত। এ বিষয়ে শেভরন ল্যাবের পরিচালক রাশেদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে অধিকাংশ বিদেশ যাত্রী আমাদের ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করেন। তাই প্রতারক চক্র শেভরনের নাম ব্যবহার করছে। আমাদের ল্যাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ এতে যুক্ত নেই। কারণ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করতে আসা সব যাত্রীকেই প্রতারক চক্রের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়। এর পরও অনেকে যাত্রী প্রতারিত হচ্ছেন।’
যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, ‘করোনা রিপোর্ট নিয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে থেকে কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সিভিল সার্জন স্যার চিঠি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. শামসুল আলম বলেন, ‘বিদেশগামীদের সঙ্গে এমন প্রতারণার ঘটনা দুঃখজনক। সংঘবদ্ধ এসব অপরাধীকে ধরতে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি যাত্রীদেরও আরও সতর্ক হতে হবে।’