আকাশপথে কক্সবাজার যেতে দিনের অপেক্ষার সময় শেষ হতে চলেছে। আর এক মাস পর রাতেও ফ্লাইট নামবে সাগরঘেঁষা রানওয়েতে। একইভাবে সারা দিন কাটিয়ে রাতে ফেরা যাবে উড়োজাহাজে।
বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরীতে অবকাঠামোর সংকটে এখন পর্যন্ত বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে। তবে সংকট আর থাকছে না ফেব্রুয়ারি থেকে। তখন রাতেও চালু রাখা যাবে বিমানবন্দর।
সংস্কার পুরোপুরি শেষ হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে কক্সবাজার।
বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ পরিদর্শন শেষে শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব জানান জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ। ছবি: নিউজবাংলা
আব্দুস শহীদ বলেন, ‘কক্সবাজারের এই বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব। সমুদ্র ছুঁয়ে নামবে বিমান। এটি বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হলে, স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক বাড়বে।’
সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে বিদেশি টেকনিক্যাল পরিদর্শকরা আসতে না পারায়, রাতে ফ্লাইট চলাচল পিছিয়েছে। এই বিমানবন্দর দিনে-রাতে ফ্লাইট চলাচলের উপযোগী এখন। ফেব্রুয়ারিতেই রাতে ফ্লাইট চলাচল করবে।’
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছে প্রতিনিধি দল। ছবি: নিউজবাংলা
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘পুরোদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কোভিডের কারণে কিছুটা বাড়তি সময় লাগলেও, আশা করছি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারব।’
কাজের অগ্রগতি
এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড, আলোক ব্যবস্থা স্থাপন প্রায় শেষের পথে। একসঙ্গে এক হাজার যাত্রীকে সেবা দিতে এক লাখ ১০ হাজার বর্গফুটের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বোয়িং ৭৭৭-এর মতো বিমান অবতরণে উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণে ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা। এখানে ট্যাক্সিওয়ে উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। থাকবে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা।
রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১২০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুট করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। রানওয়েটির ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে বাঁকখালী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। এ জন্য চলছে জোর কর্মযজ্ঞ। মূলত নদীর বুক ছুঁয়েই বিমান ওঠানামা করবে এখানে। রানওয়ে রক্ষাকারী বাঁধের পর হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপনের কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর তাগিদেই হচ্ছে কাজ
বিশ্বমানের এ বিমানবন্দর নির্মাণে প্রথম তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে বিশ্বের দরবারে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে তুলে ধরা যায়।
অবশ্য তার আগেই অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচলে সুবিধা বাড়াতে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট করা হয়। আর প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২০০ ফুট।
২০১৭ সালে সম্প্রসারিত এই রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময়ই রানওয়েটি বিশ্বমানে উন্নীত করার নির্দেশ দেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প নেয় সরকার।
প্রকল্পের যত ব্যয়
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বর্তমানের চেয়ে ১ হাজার ৭০০ ফুটের মতো বাড়ছে।