করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কার মধ্যে জারি করা বিধিনিষেধকে রাজনৈতিক বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, করোনার কারণে সভা-সমাবেশ করা না গেলে নির্বাচন কীভাবে চলছে।
বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে যেসব বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি এরই মধ্যে পাল্টে দেয়া হয়েছে। গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রতি আসনে যাত্রী তোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বাস মালিকদের পক্ষ থেকে। টিকা ছাড়া স্কুলে যাওয়া যাবে না- এমন সিদ্ধান্তও কার্যত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখন দৃশ্যমান বিধিনিষেধ বলতে রয়েছে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা, সেটি সামাজিক-রাজনৈতিক যা-ই হোক না কেন।
তবে এর মধ্যেই রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোটের প্রস্তুতি চলছে। জমজমাট প্রচারের শেষ দিন চলছে শুক্রবার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চলছে প্রচার। বন্ধ হয়নি বাণিজ্য মেলাও, যেখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হচ্ছে।
এর মধ্যে দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপি নেতার দাবি, সরকার সমাবেশে যে বিধিনিষেধ দিয়েছে, সেটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে, হাট-বাজার, যানবাহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে, সারা দেশে মেলার আয়োজন করা যাবে এবং মুজিববর্ষ পালনের কর্মসূচি দীর্ঘায়িত করা যাবে, সেখানে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ থাকতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জের ১২ নম্বর ওয়ার্ড মিশনপাড়া এলাকায় সম্প্রতি গণসংযোগ করেন বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। ছবি: নিউজবাংলা
‘কাজেই এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অগণতান্ত্রিক এবং দমনমূলক বলেই আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘এই অযৌক্তিক সরকারি সিদ্ধান্ত অবশ্যই কোভিড সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে নেয়া হয়নি। বিরোধী দলগুলোর চলমান প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত দমন করার জন্য করা হয়েছে।’
দমন-পীড়ন ও বিধিনিষেধে আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে নজরুল বলেন, ‘যথার্থ নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে এবং চলবে।’
উন্মুক্ত সমাবেশে বিধিনিষেধকে অযৌক্তিক দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ মহল যখন বলছেন উন্মুক্ত স্থানের চেয়ে বদ্ধ স্থানে কোভিড বেশি ছড়ায়, তখন বাংলাদেশ সরকার ১১ দফা নির্দেশনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করে বদ্ধ স্থানে তা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
জনস্বার্থ ও প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে চলমান সভা-সমাবেশের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমরা বিএনপি ও অঙ্গদলগুলোর সব কেন্দ্রীয় ও মহানগর ও জেলার নেতাদের কোনো নির্ধারিত তারিখে সভা-সমাবেশ সফল করার জন্য প্রস্তুতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘করোনা বিস্তারে দায়ী সরকার’
বিধিনিষেধকে রাজনৈতিক বললেও করোনা বিস্তারের জন্য সরকারকেই দায়ী করেন নজরুল। তার অভিযোগ, সরকারের অবহেলার কারণে করোনার অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে মানুষ।
তিনি বলেন, ‘করোনা বিস্তারের প্রথম দিকে সরকারের অবহেলা এবং মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন আস্ফালন জনগণকে বিপদাপন্ন ও কোভিডের অসহায় শিকারে পরিণত করেছে।
‘করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নে জনগণকে সম্পৃক্ত না করার আত্মঘাতী প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।