নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে রোববার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে একটি পক্ষ সহিংসতা চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর চেয়ে লক্ষাধিক ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হবেন।
নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিন শুক্রবার সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন আইভী।
ওই সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী প্রার্থীর অভিযোগসহ সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘একটি পক্ষ সহিংসতা চাচ্ছে। আমার নির্বাচনি এলাকায় যেখানে সবচেয়ে বেশি জমজমাট, সেই জায়গাগুলোর মধ্যে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে।
‘প্রশাসনকে বরাবরই বলে আসছি ভোটের দিন যেন উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে, আমার নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে, নতুন প্রজন্মের ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার এবং আমি নির্বাচনে জিতব ইনশাআল্লাহ। সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংসতা করে, তাহলে এটা ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় সহিংসতার বিপক্ষে; আমার পক্ষ থেকে কোনো সহিংসতা হবে না। সহিংসতা করবে আমার ওই ধরনের কোনো বাহিনীই নাই এবং আমি কোনো দিন সহিংসতা করিও নাই, কিন্তু সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। আমার ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘আমি আমার জায়গাতেই আছি। প্রথম দিকে যা বলেছি, এখনও তাতেই আছি। বারবার বলছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সতর্ক থাকে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, স্বাভাবিক হয়, কোথাও কোনো কেন্দ্র যদি বন্ধ না হয়, তাহলে আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব এবং এটা আমার চাচা তৈমূর আলম নিজেও জানেন।’তিনি বলেন, ‘আমি খুব শক্ত এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। আমার সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক রয়েছে। আমাকে দুর্বল করা এত সহজ নয়। আমি কোনো কিছুতেই দুর্বল হব না।’
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের নারায়ণগঞ্জে এসে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এর জবাবে আইভী বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনেকেই আসেন। সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হতে পারে অথবা অন্য কেউ হতে পারে। এই ব্যাপারে আমার জানা নেই কারা আসছে আর কারা থাকছে।’
তিনি বলেন, ‘সার্কিট হাউস আর ডাকবাংলোতে কারা থাকছেন সেটা জানা নেই, কিন্তু নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনেকেই আসেন। সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হতে পারে অথবা অন্য কেউ হতে পারে। এ ব্যাপারে আমার জানা নেই, কারা আসছে আর কারা থাকছে।’
আইভী বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তৈমূর। সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘বহিরাগতদের দিয়ে আমি নির্বাচন করছি। উনি (তৈমূর আলম) কী বোঝাতে চাচ্ছেন, সেটা আমার জানা নেই। আমি সব সময় বলেছি জনতাই আমার শক্তি, আমার আগের নির্বাচনের ট্রাডিশন আমি মানুষের কাছেই যাই। বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করব কেন, যেখানে আমার ভিত্তি হলো জনগণ।
‘উনি কাকে বোঝাচ্ছেন জানি না। কারণ আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। আমি রূপগঞ্জের নই যে বহিরাগত কাউকে আনব।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের শক্তি ব্যবহার করে, প্রশাসনকে কবজা করে আইভী নির্বাচনে জয়ী হতে চান বলে অভিযোগ করেছেন তার প্রতিপক্ষ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় লিডাররা নির্বাচনে একটা দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রীয় লিডাররাও জানেন, আইভী কীভাবে রাজনীতি করে, কীভাবে ভোটারদের কাছে যায়।
‘যদি তারা না জানত তাহলে কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা দিতেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন ওনার আইভী মানুষের ধারেকাছে যায়। সুতরাং কেন্দ্রীয় লিডাররা আসতেই পারেন, তারা খোঁজ নিতেই পারেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কী করছে।’
কেন্দ্রীয় নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা করেছেন, সেটা জানেন না জানিয়ে আইভী বলেন, ‘আমার যারা নেতা আছে যারা ঢাকা থেকে এসেছেন, তারা জানেন আমার সম্পর্কে। নেতৃবৃন্দ প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে গিয়ে তারা দেখেছেন আইভী কোন অবস্থানে আছে। আমার নেতৃবৃন্দ আমার বিজয় নিয়ে কখনোই শঙ্কিত ছিলেন না।‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কাউকেই প্রভাবিত করছে না। তারা কাউকে প্রভাবিত করছে এই কথাটা সঠিক না। ওনারা (কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ) অন্য কারণে এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।’
নিজ দলের কাউকে নজরদারিতে রেখেছেন কি না এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘তা বলব না, কিন্তু কেন্দ্র কী করছে, সেটা কেন্দ্রই ভালো বলতে পারবে।’প্রত্যেকটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে আইভী বলেন, ‘প্রতিটা নির্বাচনে একেক রকম চরিত্র ছিল। এবারের নির্বাচনও অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেটা বিভিন্ন কারণেই, কিন্তু এটা আমার শেষ নির্বাচন কি না, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’তিনি বলেন, ‘আইভীকে পরাজিত করার জন্য অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে কাজ করছে। সেই পক্ষটি ঘরের হতে পারে আবার বাহিরেরও হতে পারে। সবাই মিলে গেছে কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়, কীভাবে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যায়। কারণ সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।’
নির্বাচনে জয়ী হলে কী করবেন জানিয়ে আইভী বলেন, ‘প্রত্যাশিত নগরীর শেষ নাই। আপনি যত দেবেন ততই চাহিদা বাড়বে। নতুন প্রযুক্তি আসছে, নতুন কিছু চাচ্ছে মানুষ।
‘আমাদের নারায়ণগঞ্জ অনেক পুরোনো ও অনেক ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। তারপরও চেষ্টা করছি ইট-পাথরের এই শহরকে কীভাবে সবুজায়ন করা যায়।’