করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন করে আরোপ করা বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই বললেই চলে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক।
কাঁচাবাজারে বরাবরের মতোই উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহনেও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের।
করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নতুন বিধিনিষেধে ১১ দফা স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এর অন্যতম বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, তবে বিধিনিষেধের প্রথম দিন অনেককেই মাস্ক ছাড়া চলতে দেখা যায়।
ওই দিন স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যদের মাইকিং করতে দেখা যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছিল, তবে দ্বিতীয় দিনে এসে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি রাজধানীর অনেক এলাকায়।
সকাল থেকে রাজধানীর বাসাবো, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন গন্তব্যমুখী লোকজনকে অপেক্ষমাণ দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যায়।
খিলগাঁও থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে রিকশায় যাতায়াতকালে চালক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয় মাস্ক না পরার কারণ। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালানোর সময় মাস্ক পরা যায় না; কষ্ট হয়।’
সরকারের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে তো পরতে হবেই। তবে মাস্ক ছাড়া রিকশা চালালে এখনও কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি।’
সরকারের নির্দেশনায় বলা আছে, দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, কিন্তু সকালের বাজারেও তা উপেক্ষিত।
খিলগাঁও বাগানবাড়ি বাজার, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার মুখেই মাস্ক ছিল না। আর সচেতনতার অভাবে বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা দেখা যায়।
বাগানবাড়ি বাজারের বিক্রেতা আলাল বলেন, ‘আগেরবার মাস্ক পরার জন্য পুলিশের টহল ছিল, এখন সেই টহল নেই। ফলে মাস্ক না পরলেও কেউ কিছু বলে না। আর না পরলেও কোনো সমস্যা নাই।’
সরকারের নির্দেশনার কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা শুনছি। এখন মাস্ক ছাড়া থাকলেও পরে পরব।’
স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় মুসল্লিদের সচেতন করতে ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খাদেম জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে সময় সময় যেসব নির্দেশনা আসে, সবগুলোই পরিপালন করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা পরিপালন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জুমার নামাজে আগেও ইমাম সাহেব মুসল্লিদের করোনাভাইরাস থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যাবে, সে বিষয়গুলো বয়ানে বলতেন। এখন যেহেতু আবার সেই নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু ইমাম সাহেবের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়মিত পরিষ্কার করা, মুসল্লিদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
প্রথম দিকে নির্দেশনায় বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালাচলের নিদের্শনা দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বাসের যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বাসগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
রাইদা বাসের হেলপার সিরাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে রাস্তায় যাত্রী কম। সব যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকে না, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কড়াকড়ি না থাকায় যাত্রীদের মুখে মাস্ক না থাকলেও কিছু বলা হয় না।’
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগেও করোনার সময় বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন যদি অর্ধেক যাত্রী বা আসন অনুযায়ী যাত্রী নেয়ার কথা বলা হয়, তাহলে আমাদের আয় কমে যাবে। সরকার বললে তাই করতে হবে।’