পাবনায় এখন মানুষের চলাচল বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইপিজেড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে পাবনায় যেতে হচ্ছে। সড়কপথে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর দাবি জানিয়েছেন কয়েকটি জেলার মানুষ।
বিমানবন্দরটি চালু হলে পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলার মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি ওই এলাকার মানুষের।
এ ছাড়া সরকারের মেগা প্রজেক্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বিদেশিদের পক্ষ থেকেও যাতায়াতের সুবিধার জন্য দ্রুত বিমানবন্দরটি চালুর দাবি জানানো হয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে লোকসানসহ নানা অজুহাতে প্রথম বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। কিছু দিন বিমান চলাচলের পর আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।
সে সময় ৬ মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবার বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি।
তবে মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানগুলোকে এটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
বিমান চলাচল খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, পরিস্থিতি এখন বদলেছে, তাই বিমানবন্দরটি চালু করা জরুরি।
ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের জন্য ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪৫ দশমিক ৯১ একর জামি এখন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। এই জমিতে বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, এপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে।
বাকি ২৯০ দশমিক ৭৪ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। ওই জমি সিএএবিকে হস্তান্তর করা হলে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার করে আবার চালু করা যাবে।
বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে বলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে জানিয়েছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
দীর্ঘদিন সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবির শুরু করেন।
এরপর গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ঈশ্বরদী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন।
পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনের সংসদ সদস্য নূরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটেছে। এ ছাড়া ঈশ্বরদী ইপিজেড, বাংলাদেশ সুগারকর্প রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, পাবনা সুগার মিল, রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিস, সহস্রাধিক হাসকিং চাল কল আছে।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে প্রকল্প কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঈশ্বরদীতে। বিমানবন্দরটি চালু হলে অল্প সময়ে যাতায়াতের সুবিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সরকার ও এ অঞ্চলের মানুষ।’
এ ব্যাপারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের হেড অফ মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস এম শফিকুল ইসলাম দেশের অব্যবহৃত বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার জন্য সিএএবির সঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘যদি সিএএবি ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে ৫০০ মিটার প্রসারিত করে, তাহলে আমরা এটিআর ৭২-৬০০-এর মতো ছোট বিমানের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব।’
তিনি দাবি করেন, এই রুটে বিমান ভ্রমণের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যা এখন খুব প্রয়োজন।
বিমানের মার্কেটিং বিভাগের জিএম মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যতক্ষণ না সিএএবি এই বিমানবন্দরকে সংস্কার করে এবং এয়ারলাইনসগুলোকে সেখানে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করতে পারছেন না।’