একাধিক খুনের দায় নিয়ে প্রায় সাত বছর পলাতক জীবনযাপন করেন বগুড়ার হেলাল হোসেন। এরই মাঝে ‘বাউল’ পরিচয়ে বদলে ফেলেন বেশভূষা। সেলিম ফকির নাম নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকায় গড়ে তোলেন আস্তানা। বিয়ে করেন, সংসার করতে থাকেন সেখানে। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর হেলাল স্বীকার করেছেন তার অন্ধকার অতীতের নানা তথ্য।
র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ে জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করা হেলালের বাড়ি বগুড়ায়। একসময় তিনি মুদি দোকানি ছিলেন। একাধিক হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় এক পর্যায়ে ছদ্মবেশে বিভিন্ন মাজার ও রেলস্টেশনে থাকা শুরু করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বড় দাড়ি ও চুল রেখে বাউল সাজেন। স্টেশনে গান শুনিয়ে বাউল পরিচয় পোক্ত করেন।
বাউল গানে যতোটা পরিচিতি পান সেলিম ফকির, তার চেয়ে বেশি সাড়া ফেলেন মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়ে। জি সিরিজের ‘ভাঙ্গা তরি ছেড়া পাল’ গান দিয়ে ভাইরাল হন সেলিম। আর তাতেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় উল্টোপথে। বেরিয়ে আসে তার ‘খুনি’ পরিচয়। র্যাবের কাছে তথ্য আসে পলাতক এ আসামি নিয়ে। তথ্য যাচাই ও অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার রাতে র্যাব ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করে সেলিম ফকির পরিচয় দেয়া হেলাল হোসেনকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সেলিম স্বীকার করে নেন ছদ্মবেশের কথা। র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে জানান অতীতে নানা অপরাধে জড়িত থাকার কথা।
কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের মিউজিক ভিডিওতে সেলিম ফকির ওরফে হেলাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
র্যাব জানায়, ‘ভাঙ্গা তরি ছেড়া পাল’ গানের বাউল মডেল প্রকৃতপক্ষে একজন ‘সিরিয়াল কিলার’ ছয় মাস আগে এমন তথ্য এসেছিল র্যাবের কাছে। তারপর র্যাবের গোয়েন্দারা অনুসরন ও অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয় কথিত বাউলের প্রকৃত পরিচয়। মঙ্গলবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হেলালকে।
র্যাবের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর মাহমুদুল হাসান বিদুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি হেলাল নিজেকে আড়াল করে ফেলেন ফকির সেলিম পরিচয়ে। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা ও ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিও হেলাল।
জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল জানান, বিষ্ণু হত্যার সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর। এ খুনের পর অনেকেই কিলার হেলাল নামে ডাকতে শুরু করেন। পরে রবিউল হত্যাসহ একাধিক ঘটনায় নাম ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানার একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি ছাড়াও নারী নির্যাতনের মামলা আছে। অনেক মামলার খোঁজ জানেন না তিনি। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতেই এলাকা ছাড়েন।
র্যাব হেফাজতে পলাতক আসামি হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির। ছবি: সংগৃহীত
র্যাব জানায়, ৭ বছরের পলাতক জীবনের মধ্যে শেষ চার বছর কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে ছিলেন হেলাল। সেখানে এক নারীর সঙ্গে সংসার শুরু করেন। রেলস্টেশনে বাউল গান করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
পলাতক জীবনের শুরুতে হেলাল বগুড়া থেকে ঢাকায় আসেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে হযরত আমানত শাহ-এর মাজারে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে চলে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ছদ্মবেশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার রেলস্টেশন ও মাজারে ঘুরতে থাকেন।