বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ‘লাঞ্ছনা’ ও এর জেরে হামলার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামির স্ত্রী সেই ছাত্রীর স্বামীর নামে পাল্টা মামলার আবেদন করেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীর স্বামীসহ ৪০ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করেন লুৎফুর নাহার কাজল।
তিনি বরিশাল সদরের চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইদুল আলম লিটনের স্ত্রী।
বিচারক আল ফয়সাল অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বন্দর থানার ওসিকে মামলা রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আতিকুর রহমান জুয়েল।
এর আগে ইউপি সদস্য লিটনসহ চার থেকে পাঁচজনের নামে বন্দর থানায় বুধবার রাতে মামলা করেন ওই ছাত্রীর স্বামী।
সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ইউপি মেম্বার সাইদুল আলম লিটনের অনুসারী জাহিদ হোসেন জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রায়ই উত্যক্ত্য করেন। মঙ্গলবার এক ছাত্রী তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গেলে জয়ের নেতৃত্বে কয়েক যুবক তাদেরকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেন।
রকিবুল ইসলাম ইয়ামিন নামে এক ছাত্র জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আনন্দ বাজার এলাকায় জয়সহ কিছু লোক এক ছাত্রী ও তার স্বামীকে মারধর করেন। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার পর লিটন ও জয়ের স্বজনরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
লিটনের বাবা আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘কোনো কিছু বোঝার আগেই তারা আমার ঘরে হামলা করছে, ভাঙচুর করছে। আমি বার বার কইছি বাঁচাও, কেউ কথা শোনে নাই। আমি বুড়া মানুষ, আমার পিঠেও দুইটা ঘুষি দেছে।’
লিটন ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ‘অতর্কিত হামলা করা হইছে আমাগো ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপান এইয়া করছে। লিটনেরও খোঁজ নাই আমাগো ধারে।’
জয়ের মা জোৎসনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কিছুই জানে না। এর আগেও আমাগো ঘর ভাঙচুর হইছে। আমারে একজনে ফোন দিয়া কইছে আপনে ঘর দিয়া বাইরান, ছাত্ররা যাইতেছে ঘর ভাঙতে। দুই-তিন শ পোলাপান আইয়া আমার ঘরের টিভি, ফ্রিজ, আলমিরা ভাঙছে। স্বর্ণ ও টাকা লুটপাট কইরা নেছে।’
এ ঘটনার পর বুধবার রাতে লিটন ও জয়সহ ৪-৫ জনকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর স্বামী। অভিযোগে তিনি জানান, আসামিরা তাকে ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
লিটনের স্ত্রী কাজল আবার ওই ছাত্রীর স্বামীকে আসামি করে হামলার মামলার জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করেন।
তাতে অভিযোগ করা হয়, আসামির (ওই ছাত্রীর স্বামী) নামে ঝালকাঠি সদর ও বন্দর থানায় একাধিক অভিযোগ আছে। আসামি ও তার লোকজন মিলে জয়কে মারধর করে। লিটন তাতে বাধা দিতে গেলে তাকেও রড দিয়ে পেটানো হয়। এর জেলে লিটনের বাড়িতে আসামিরা হামলা ও লুটপাত চালায়।
তবে এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওই ছাত্রীর স্বামী ছাড়া অন্য সব আসামিকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি দেখানো হয়েছে।