নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি তুলেছে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়া আন্দালিব রহমান পার্থর দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি।
বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে সংলাপ শেষে বেরিয়ে পার্থ সাংবাদিকদের এমন কথা জানান।
এদিনই সংলাপে এসে আলোচ্যসূচির বাইরে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি করেছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। যারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে পার্থ বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আমরা নির্বাচনের পরিবেশসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে কথা বলতে চাই। সেক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়টা এখন জনগুরুত্বপূর্ণ। কোনো কারণে আল্লাহ না করুক কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা যদি ঘটে, রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে একটা প্রভাব আসবে।
‘এজন্য মানবিক কারণের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক মাথায় রেখে আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছি উনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার জন্য যে ব্যবস্থাটা, ব্যাপারটা যেন উনি কেবিনেটে নেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা কী আইন অনুসারে হবে; কারণ আইন তো সবার জন্যই সমান- এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য সবার না। আইনের মধ্যে অনেক জায়গা রয়েছে। যেখানে বলা আছে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রপতি কোনো আশ্বাস দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। উনি কিছুই বলেননি।’
পার্থ বলেন, ‘তখন আমি উনাকে বললাম, অনেকেই বলেন, সরকার অনেক কিছু করেছে। আমার প্রশ্ন হল সরকার কি করে না করে সেটা পরের কথা। রাষ্ট্রপতি একটা আলাদা প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির এই যে নীরব ভূমিকা সেটা প্রতিষ্ঠানটিকেই অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন করে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে যে সাতটি রাজনৈতিক দল আসেনি তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই আপনি দোষারোপ করতে পারবেন না। আমরা এসেছি এই কথাগুলো বলার জন্য। একটা সময় তো আমরাও আসবো না।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আইনজীবী হিসেবে প্রক্রিয়া কি হতে পারে বলে মনে করেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়া তো হতেই পারে। সরকারের কাছে আবেদন করা হতে পারে। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঠিয়ে দিতে পারে।’
পার্থ বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছি সেখানে প্রথম প্রস্তাব বলেছি, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। কারণ এতে প্রশাসন অনেক বেশি উৎসাহী থাকে।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয় না গত দুই নির্বাচনে সেটা প্রমাণিত।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রস্তাবে আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন আইন করার বিষয়ে। ৫০ বছরের যা হয়নি সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যা করতে সব সময় সময়ের অজুহাত দেখানো হয়। আমরা সার্চ কমিটি নিয়ে কোন কথা বলিনি।’
আন্দালিব রহমান পার্থের দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত আকারে যে প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো হলো
১. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৫) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্দলীয় বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বিষয়টি যেন মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করেন।
২. নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন না থাকায় সরকার নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সার্চ কমিটি এবং কমিশন গঠনে সুযোগ পায়, সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নিদের্শনা আছে। এ অবস্থায় সংবিধানের আলোকে এই প্রয়োজনীয় আইন করার দাবি।
৩. বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থার বিষয়টি এখন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিনত হয়েছে। মানবিক কারণ, ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সৌহদপূর্ণ সম্পর্ক এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় পেশ করার দাবি।
৪. বাংলাদেশের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান দেশ এবং বিদেশে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে তার মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যতম, এমতাবস্থায় দেশের সেনাবাহিনীকে নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগী শক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হচ্ছে।