ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালি গানের আসরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠার মধ্যে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি একই ধরনের গানের উৎসবের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছে। তবে আয়োজনের দিনক্ষণ এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কেবল কাওয়ালি নয়, আউল-বাউল, লালন, জারি-সারি, মুর্শিদি সব ধরনের গান নিয়ে আমরা কর্মসূচির আয়োজন করতে চাই। আর সেটির সময়সূচি আমরা জানিয়ে দেব।’
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওয়ালি ব্যান্ড ‘সিলসিলা’ ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশের উদ্যোগে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কাউয়ালি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একদল ছাত্রের হামলায় এই অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।
আয়োজকদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মীরাই এই হামলা চালিয়েছেন।
সে সময়ই অভিযোগ উঠে, উর্দু গান বলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই এই হামলা করেছেন। যদিও সাদ্দাম বলেছেন, উল্টো কথা। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে বিভিন্ন মতবিরোধ ছিল। কোন তরিকায় প্রোগ্রামটা হবে, মেয়েরা উপস্থিত হতে পারবে কি না, হালাল, নাকি হারাম সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বে আয়োজকদের মধ্যে পূর্ব থেকে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল।’
এই হামলার পর সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর একটি অংশ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে জাতির পিতা লেখেন, কোথাও একটি আয়োজনে গিয়ে কাওয়ালি শুনে তারা মুগ্ধ হয়ে টাকা দিয়েছেন। সেখান থেকে আসতেও ইচ্ছা করছিল না।
ছাত্রলীগের একজন নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মোটেও কাওয়ালির বিরোধী না। কিন্তু এটা বলে আমাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ছাত্র সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলছেন, বুধবারের গানের আসর নিয়ে আসলে তাদের কোনো আপত্তি ছিল না। আপত্তি ছিল আয়োজকদেরকে নিয়ে। রাজনীতি ও ধর্ম মেশাতে চায়, এমন গোষ্ঠী ছিল সেখানে, পাশাপাশি গণ অধিকার পরিষদের একটি অংশও ছিল। সেই উদ্যোক্তাদের বিরোধী ছিলেন তারা।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজনের মধ্যেই থাকি। সেগুলোর ধারাবাহিকতায় আমরা এ অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করব।
‘আমরা চাই সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা প্রগতিশীল শক্তির একটা বাহন হিসেবেই যেন থাকে। এগুলোকে ব্যবহার করে কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ এবং সোচ্চার রয়েছি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর বলেন, ‘ছাত্রলীগ অতীতে অনেকবার কাওয়ালি আসরের আয়োজন করেছে। আমরা জানতে পেরেছি সামনেও ছাত্রলীগ এ ধরনের আসর করবে। একজন কর্মী হিসেবে আমি এটিকে স্বাগত জানাই। ছাত্রলীগের হাত ধরেই এ ধরনের প্রগতিশীলতা চর্চার স্রোতধারা এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
‘একটি পক্ষ ছাত্রলীগকে প্রগতিশীলতা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চেয়েছে। ছাত্রলীগই বরং বাঙালি সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি ধারণ করে।’
সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) একটা গোষ্ঠী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হারমোনিয়াম এবং বাদ্যযন্ত্র ছাড়া কাওয়ালি করেছে। এগুলো ছাড়া কাওয়ালি কীভাবে সম্ভব আমার জানা নেই। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, যারা হারমোনিয়াম হারাম বলে তারাই এটি রাখেনি। মূলত যারা এ সংস্কৃতিকে ধারণ করে না তারা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসবের আয়োজন করছে।’
বুধবারের হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সিলসিলা ব্র্যান্ডের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে কাওয়ালি পরিবেশন করা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টা এই আয়োজন চলে। আয়োজনে কাওয়ালি গান ছাড়াও র্যাপ গান এবং নজরুল সঙ্গিতও গাওয়া হয়। এই আয়োজনে কোনো হাঙ্গামা হয়নি।
আয়োজনের বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম সালেহ উদ্দীন সিফাত বলেন, ‘গতকালের হামলার প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই আয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি সংস্কৃতির কোনো বাউন্ডারি নেই। সংস্কৃতির কোনো ম্যাপ থাকতে পারে না। যারা সংস্কৃতিতে রুখে দিতে চায়, গান, সুরকে রুখে দিতে চায় তারা সাংস্কৃতিক দস্যু। তাদেরকে আমরা সংস্কৃতির মাধ্যমেই প্রতিহত করব।’