নির্বাচনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্লকচেইন পদ্ধতি সংযোজন এবং ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে ভোটারদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দিয়েছে জাকের পার্টি।
বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এমন কথা জানান দলের চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল। তিনি মনে করছেন, তাদের এ প্রস্তাবে ঘরে বসে ভোট দেওয়া সম্ভব, যা ভোটারদের উৎকণ্ঠা কমাবে।
জাকের পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্রগুলোয় যেভাবে কেন্দ্র দখলে হানাহানি, মারামারি, আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া উচিত।
‘ভোটগ্রহণ বা নির্বাচনে দেশবাসীর রক্ত ঝরবে, নিহত হবে- তা কোনোভাবেই সুখকর সংবাদ হতে পারে না। এ ধারাবাহিকতা গণতন্ত্রের মসৃণ অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে এবং এই ধারার নির্বাচনকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনিভাবে এর ব্যাপকতায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে। এ ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা কিন্তু বৃহৎ বিপর্যয়ের বীজ বপন করে।’
মোস্তফা আমীর ফয়সাল বলেন, ‘তাই ভোটারদের উৎকণ্ঠা কমাতে ও নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ই-ভোটিং প্রক্রিয়ায় ঘরে বসে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে এ ধরনের হানাহানি, মারামারি, দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদভাবে যদি টাকা লেনদেন করা যায়, তবে ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ ভোট দেয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা এবং ভোটারদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা যাবে না কেন? ঘরে বসে কেন সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারব না?’
এ ছাড়া জাকের পার্টির আরও তিনটি প্রস্তাব রয়েছে। যার একটি হলো নির্বাচন কমিশন আইন। এ প্রসঙ্গে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আইনের ধারা-উপধারা সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা নেই। আইন প্রণয়নের ধারা এবং উপধারার বিস্তারিত খসড়া এখনই প্রস্তুত করে যদি নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো যায়, তাহলে তারা তাদের স্ব-স্ব দলের পছন্দ-অপছন্দ ও মতামত জানাতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ বিশেষ দলের জন্য সংবিধান বারবার সংশোধনের প্রক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী একটি প্রক্রিয়া। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণায় আমরা বিশ্বাস করি না।’
দলের তৃতীয় প্রস্তাব হলো নিবন্ধিত দলগুলোর স্ব-ঘোষিত, আত্মস্বীকৃত ভোটারদের ডাটাবেজ তৈরি এবং তা প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমাদান। নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু দলগুলোর ভোটের আগে গভীর আশা, ফলাফলের পর তীব্র অসন্তুষ্টির অবসানে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ দলের সদস্য ও সমর্থক ভোটারদের ছবি ও স্বাক্ষর-সংবলিত ডাটাবেজ তৈরি করার আহ্বান জানাবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের ডাটাবেজ তৈরি করবে এবং নির্বাচন কমিশনেও তা জমা দেবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ছয় মাস আগে এই ডাটাবেজ অ্যাপের মাধ্যমে জনগণের কাছে প্রকাশ করবে। ফলে আগে থেকেই জানা হয়ে যাবে কার কেমন আত্মস্বীকৃত ভোটার রয়েছে।
দলটির চতুর্থ প্রস্তাব সার্চ কমিটি গঠন। প্রস্তাবে দলটি বলেছে, এসবের পাশাপাশি বিতর্কমুক্ত অধিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। তাই জাকের পার্টি মনে করে নির্বাচন কমিশন গঠনে বিতর্কমুক্ত আইন প্রণয়ন, আনহ্যাকেবল ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-ভোটিং ব্যবস্থা বাস্তবায়ন নির্বাচন প্রক্রিয়ার পথপরিক্রমাকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করবে এবং ভোটের ফলাফল বিতর্কমুক্ত রাখবে।
তারা বলছেন, সাংবিধানের ধারা মোতাবেক প্রযুক্তির ব্যবহার সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে সহায়তা করবে। সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন কমিশন গঠনে বিতর্কমুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক।
তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন জানতে চাইলে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশেষ করে ব্লকচেইন ও ই-ভোটিং মহামান্য রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত স্বাগত জানিয়েছেন।’
আপনারা প্রস্তাব দিয়েছেন ঘরে বসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ভোট দেওয়ার বিষয়ে, যেখানে ইভিএমেরর ওপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়নি- এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক কিছু তাড়াতাড়ি হয়েছে। ইচ্ছে করলেই করা যায়। দেশে যেভাবে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে, আমরা অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা-পয়সার লেনদেন করেছি। তাহলে এটা করা খুব কঠিন কাজ বলে আমার মনে হয় না।’
এর আগে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে জাকের পার্টির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের নেতৃত্বে দলের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, ভাইস চেয়ারম্যান ড. সায়েম আমীর ফয়সল, ফারাহ আমীর, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আ ন ম মনিরুজ্জামান, জাকের পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক খান।