বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধনু নদীতে ফেরি চালু হচ্ছে, হাওরবাসীর উচ্ছ্বাস

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:১৭

নেত্রকোণা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘খালিয়াজুরীর রসুলপুর এলাকার ধনু নদীতে একটি ফেরি সার্ভিস চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বরাদ্দ হবে।’

নেত্রকোণার হাওরদ্বীপখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। ওই উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত ধনু নদীর জন্য বরাদ্দ হচ্ছে একটি ফেরি। আর এই খবরে অন্যরকম এক আনন্দের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপজেলায়।

একটি ফেরির মধ্য দিয়ে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে উপজেলাবাসীর। এটিকে ঘিরে এলাকার যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সবকিছু বদলে যাওয়ার নতুন স্বপ্ন দেখছেন তারা।

নেত্রকোণা জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা খালিয়াজুরী। হাওর-বাঁওড়ের এ উপজেলা বছরের প্রায় ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। বাকি ছয় মাস চলতে হয় ডুবন্ত সড়ক (সাব-মার্জিবল রোড) বা ক্ষেতের আইলপথ ধরে।

নেত্রকোণা থেকে মদন উপজেলা সদর পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ওই উপজেলাটিতে। মদনের উচিতপুর থেকে খালিয়াজুরী সদর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সাব-মার্জিবল (ডুবন্ত) সড়ক আছে। শুষ্ক মৌসুমে এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে যাতায়াত করা যায়।

তবে খালিয়াজুরীর তিন কিলোমিটার আগে অবস্থিত রসুলপুর এলাকার ধনু নদীতে কোনো সেতু না থাকায় তা পাড়ি দিতে হয় খেয়া নৌকায়।

এ কারণে খালিয়াজুরী সদরে কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহন পৌঁছায় না। অর্থাৎ একটি ফেরি বা সেতুর অভাবে জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে উপজেলাটি। এ অবস্থায় প্রশস্ত নদীটিতে খেয়া পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যয় করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।

স্থানীয় ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া খেয়া নৌকাটিও বেশ ছোট। সব সময় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়। এ কারণে যাত্রীদের নিতে হয় ঝুঁকি।

খেয়া পাড়ি দিয়ে নদীপাড়ে উঠতে গিয়ে শিকার হতে হয় নানা বিড়ম্বনার। মোটরসাইকেল বা ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে গিয়ে পড়তে হয় বিপদে। তাই সেখানকার বাসিন্দারা ধনু নদীর রসুলপুর ঘাটে একটি ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা হয়নি।

খালিয়াজুরীর সন্তান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার তার উপজেলাবাসীকে প্রথম সুখবরটি দেন। নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘... চেষ্টা করছিলাম ধনুতে একটি ফেরির ব্যবস্থা করতে। আজ সেই ফেরিটির অনুমোদন হলো। জয়বাংলা।’

মন্ত্রীর দেয়া স্ট্যাটাসে আনন্দিত হন দুর্গম উপজেলাটির বাসিন্দারা। তারা মুহূর্তের মধ্যে স্ট্যাটাসটি ভাইরাল করে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেত্রকোণা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘খালিয়াজুরীর রসুলপুর এলাকার ধনু নদীতে একটি ফেরি সার্ভিস চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বরাদ্দ হবে।’

ভবিষ্যতে সেখানে উঁচু সেতু এবং মদনের উচিতপুর থেকে খালিয়াজুরী সদর পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণের চিন্তাভাবনা আছে- এমনটিও জানান ওই কর্মকর্তা।

খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘ধনু নদীর রসুলপুর ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে জেলা সদরের সঙ্গে খালিয়াজুরীর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। খালিয়াজুরী থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা যাবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, জিপ প্রভৃতি গাড়ি নিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাবে খালিয়াজুরীতে। এ ছাড়া কৃষিনির্ভর এ এলাকার কৃষকদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

‘বর্তমান অবস্থায় খালিয়াজুরী সদরে চার চাকার কোনো গাড়ি চলে না’, যোগ করেন তিনি।

‘খালিয়াজুরী উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক স্বাগত সরকার শুভ বলেন, ‘উপজেলা সদরে কোনো যানবাহন না আসায় আমরা অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছি। ইউনিয়নগুলো থেকে কেউ চাইলেই রাতের বেলা উপজেলা সদরে আসতে পারেন না। জরুরি ও জটিল রোগীদের পরিবহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

‘দূরের শিক্ষার্থীরা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। কৃষিপণ্য ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করতে হয় শ্রমিক দিয়ে। তাই একটি ফেরি চালু হলে আমাদের উপজেলার সম্পূর্ণ চিত্রটি পাল্টে যাবে। গতি আসবে অর্থনীতিতে।’

এ বিভাগের আরো খবর