ভোগান্তির আশঙ্কায় করোনার বিধিনিষেধে বাসে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যতগুলো আসন আছে, তত যাত্রীই তোলা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এনায়েত বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী তোলা হলে রাজধানীতে পরিবহন-সংকটের কথা তুলে ধরে প্রতি আসনে যাত্রী তোলার অনুরোধ করেছিলাম বিআরটিএর কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ আজকে তাদের পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। যদিও লিখিত আকারে আমরা এখনো কিছু পাইনি।’
অবশ্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কোনো বক্তব্য নিউজবাংলা এখন পর্যন্ত পায়নি। সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভি করেননি।
পরে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সরওয়ার আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এখনও লিখিত আদেশ জারি হয়নি। তবে সেটা যেকোনো মুহূর্তে জারি হয়ে যাবে।’
গত ১০ জানুয়ারি ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে যে আদেশ জারি করা হয়, তাতে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করতে বলা হয়। এর আগেও তিন দফা এই ধরনের নির্দেশ জারি হয়েছে। প্রতিবার নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ বেশি আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এবার জানিয়ে দেয়া হয়, বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না।
শুরুতে বৃহস্পতিবার থেকে অর্ধেক যাত্রীর তোলার নির্দেশ দেয়া হলেও পরে দুই দিন পিছিয়ে দেয়া হয়।
তবে এই নির্দেশ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এর কারণ, এবার বিধিনিষেধে অফিস আদালত বা বিপণিবিতানে উপস্থিতি কমাতে বলা হয়নি। ফলে নগর পরিবহনে উঠতে গিয়ে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
গত ১ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই চিত্র দেখা গেছে। ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের আগে চার দিন সে সময় অফিস আদালত খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করার নির্দেশ দেয়ার পর অফিসগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ বাসে চড়তে পারেননি। পরে বিক্ষোভও করেন তারা।
বাসের বদলে হেঁটে, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে, ভ্যানে, পিকআপ বা প্রাইভেট কার ভাড়া করে কর্মস্থলে যেতে হয়।
বুধবার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএর যে বৈঠক হয়, তাতে বাসমালিকরা বিষয়টি তোলেন। তারা প্রতি আসনেই যাত্রী তোলার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান জানান, এই দাবির বিষয়টি তারা সরকারের কাছে তুলে ধরবেন।
সেই সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিমানে যেভাবে সব সিটে যাত্রী নেয়, সেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাত্রী বহন করতে চাই।
‘অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে সংকট হবে। আর হঠাৎ করে বাসের সংখ্যা বাড়ানোও সম্ভব না। সরকার যে সিদ্ধান্তই নেবে তা ভাড়া বৃদ্ধি না করে আমরা গাড়ি চালাব।’
গত সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে করোনার বিধিনিষেধ দেয়া হয়। এতে বৃহস্পতিবার থেকে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রীসহ ১১টি নির্দেশ দেয়া হয়।
পরে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী তোলার আদেশ দুই দিন পিছিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে ট্রেনে আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।