নিজ দল বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। প্রার্থিতা ঘোষণার পর দল থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু তৈমূরের দাবি, এটি বিএনপির একটি কৌশল। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বক্তব্য- দলের নয়, এটি তৈমূরের নিজেদের ভোট টানার কৌশল।
নিউজবাংলাকে তৈমূর বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাটা দলের কৌশলগত অবস্থান। বরং কেন্দ্রীয় ও জেলার সব নেতাকর্মী আমাকে সমর্থন করছেন। আমার পক্ষে তারা ভোটের প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন। তাছাড়া দলে বিভাজন এলেও আমার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কখনোই শেষ হবে না।’
তৈমূরের এই বক্তব্য নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে। তারা বলছেন উল্টো কথা। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দলে পদ হারিয়ে তৈমূর নিজেই কৌশল করে বিএনপির সমর্থনের কথা বলছেন। উদ্দেশ্য, বিএনপির ভোটগুলো যেন তার পক্ষেই পড়ে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জ্যোষ্ঠ সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। দলের চূড়ান্ত পর্যায় থেকে নির্দেশনা আছে যে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এটাই হল আমাদের রাজনৈতিক কৌশল।’
তৈমূর কোন কৌশলের কথা বলছেন- প্রশ্ন রেখে সাখাওয়াত বলেন, ‘এটা দলের কৌশল হলে দল তো আমাকেও বলত তাকে সাপোর্ট করার জন্য। তেমন কোনো নির্দেশনা তো দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে- তার পক্ষে কেউ কাজ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘দল যদি কৌশলগত কারণে তার এই সিদ্ধান্তে মৌন সমর্থন দিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হল কেন? বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে প্রার্থীকে মৌন সমর্থন দেবে আর এটাকে কৌশল হিসেবে বলা হবে- বিষয়টি হাস্যকর।’
নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘উনি আমাদের সিনিয়র নেতা। আমরা তার লিডারশিপে সামনে বড় ধরনের আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছিলাম। সেখানে উনি এমন একটা কাজ করলেন যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির জন্য একটি বাজে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হল। ওনার এই সিদ্ধান্তে আমরা খুবই হতাশ। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা ওনাকে সমর্থন করব সেটা কখনোই হবে না।
‘তৈমূর আলম খন্দকারকে আমি খুবই সম্মান করি। ওনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কও খুব ভাল। কিন্তু আমি তো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারব না।
‘ওই ঘটনার পর মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জেলা ছাত্রদল কোনোভাবেই যেন তার নির্বাচনী প্রচারে না থাকে। আমি সে অনুযায়ী আমার কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।’
তৈমুরের সঙ্গে বিএনপির কারা কাজ করছেন জানতে চাইলে মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘উনি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দলে ওনার অনেক অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। তারা হয়তো তাকে সমর্থন করে থাকতে পারেন। কিন্তু সেটাকে ঢালাওভাবে কেন্দ্রীয় বিএনপি-জেলা বিএনপির সমর্থন বলা ভুল হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তৈমূরকে মূলত সমর্থন দিচ্ছেন কিছু সুবিধাবাদী নেতাকর্মী। তারা নারায়ণগঞ্জে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় থাকেন।
তৈমূরের পক্ষে প্রচারে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্যতম চারজন হলেন- বন্দর উপজেলার সাবেক বিএনপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিয়াদ মো. চৌধুরী ও কুতুবপুর ইউনয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওই চার নেতার সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা।
মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ‘২০১৮ সালে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ায় আমাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাই পরবর্তীতে আমি আওয়ামী লীগে যোগ দেই। কিন্তু আমি তৈমূর আলম খন্দকারকে সমর্থন করছি না।’
বন্দর উপজেলা বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘আমি তৈমুর সাহেবকে সমর্থন করছি কারণ তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাকে সমর্থন করতে কোনো অসুবিধা নেই। দল থেকেও আমাদের এমন কিছু বলা হয়নি। এটা দলের কৌশল। আর কৌশল না হলে তো দল থেকে প্রেস কনফারেন্স করে এই সিদ্ধান্ত জানাত যে তৈমূর সাহেবের পক্ষে কাজ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওসমান পরিবারের সঙ্গে সখ্য’র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেলিম ওসমান সাহেব আমার এলাকার এমপি। আর আমি উপজেলা চেয়ারম্যান। আমরা যে দলই করি না কেন উন্নয়ন কাজের জন্য এমপির কাছে যেতেই হয়। সেজন্য অনেকে মনে করে আমি তার লোক। কিন্তু তার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতাদর্শে কোনো মিল নেই।’
ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিয়াদ মোহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি শুরুতে তৈমূর সাহেবের ভোটের প্রচারে ছিলাম। দলের সিদ্ধান্ত জানার পর আর সেখানে যাইনি। আমার কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়।’
ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাকে তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারে সব সময় দেখা গেছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।