স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের চালক আব্দুল মালেক ওরফে বাদল আটক হওয়ার পর প্রায় দেড় বছরেও তার দুর্নীতি মামলার বিচার শুরু হয়নি। তবে অস্ত্র মামলার বিচার শেষ হয়ে তার ১৫ বছরের সাজা হয়েছে।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলোচিত হয়ে ওঠেন এ গাড়িচালক। বিশেষ করে তার আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি বিস্ময়ের জন্ম দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। সে মামলা দুটির বিচারকাজ শুরুর অপেক্ষায়।
গ্রেপ্তারের এক বছর পর ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম তাকে অস্ত্র মামলায় কারাদণ্ড দেন। আব্দুল মালেক এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
মালেকের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম অনি নিউজবাংলাকে জানান, অস্ত্র মামলায় মালেককে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। কারণ অস্ত্র ও গুলি তার কাছ থেকে উদ্ধারের কোনো প্রমাণ সাক্ষীরা দিতে পারেননি। মামলাটির রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে, তবে এখনও তার জামিন শুনানি করা হয়নি।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মালেক ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন তিনি। চাকরির তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ আছে।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি আলাদা দুটি দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে আবদুল মালেক ও স্ত্রী নার্গিসের বিরুদ্ধে দুটি মামলার অনুমোদন দিয়ে তা আদালতে পাঠান মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আব্দুল মালেক দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। তিনি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রেখেছেন।
অন্য মামলার অভিযোগে বলা হয়, মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ভোগদখলে রাখার কাজে পরস্পরকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন।
দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে তা আদালতে উপস্থাপন করেন দুদক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
১২ জানুয়ারি দুটি মামলারই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে দুটি মামলার শুনানি একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে।