বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনে চাকরি হারানো কর্মীদের ৭ শতাংশ এখনও বেকার

  •    
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:০১

‘ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের ওপর সাম্প্রতিক লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ।

পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান শিল্প- করোনা মহামারিতে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি খাত। ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে চাকরি হারিয়েছেন ৮৭ শতাংশ কর্মী। তাদের ৭ শতাংশ এখনও বেকার এবং গড়ে তাদের আয় কমেছে ৮ শতাংশ।

কর্মী বা শ্রমিকের হিসাবে করোনায় ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশই ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া হোটেল ব্যবসায় ৬০ ও পরিবহন খাতে ৭০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছে পরিবহন খাতের কর্মীরা, যা গড়ে ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ‘ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের ওপর সাম্প্রতিক লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ধানমণ্ডির বিলস্ সেমিনার হলে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফল তুলে ধরেন বিলস্ উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ ও নাজমা ইয়াসমীন উপস্থিত ছিলেন।

বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘দেশে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তায় কিছু হয়নি। আগে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ালে এক-দু’জন ভিক্ষুক দেখা যেত। আর এখন ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি ভিক্ষুক দেখা যায়। দেশ উন্নত হলেও শ্রমিকদের জন্য কিছু হয়নি। আগে শ্রমিকরা যে বেতন পেতেন তাতে মাস চলে যেত। কিন্তু এখন আট হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকদের ১৫ দিনও চলে না।’

শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত তিন খাত

ঢাকা শহরে ৪০০ শ্রমিকের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছে বিলস। ঢাকা শহরকে ছয় ভাগে ভাগ করে প্রতি জোনে ৬৬ জনের মতামত নেয়া হয়েছে। এসব শ্রমিকের অধিকাংশের গড় বয়স ৩২ বছর। এর মধ্যে ৫ শতাংশ শিশু শ্রমিকও রয়েছে। তিন খাত মিলে পুরুষ শ্রমিক ৯৬ ও নারী ৪ শতাংশ। ঢাকার বাইরের ৬০ জন শ্রমিকের মতামত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩০ জন প্রতিষ্ঠান মালিকও মতামত দিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউনে (৫ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট ২০২১) চাকরিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। তাদের মধ্যে পরিবহন খাতে ৯৫, দোকানপাট খাতে ৮৩ ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ৮২ শতাংশ কর্মী কাজ হারান।

লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ৯৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন। তবে ৭ শতাংশ এখনও বেকার। তবে লকডাউনের সময়ে এসব খাতে শ্রমিকদের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান বেড়েছিল ২১৫ শতাংশ।

অন্যদিকে লকডাউনে তিনটি খাতে কার্যদিবস কমে যায় ৭৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ কার্যদিবস কমেছে পরিবহন খাতে।

গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনে তিনটি খাতের শ্রমিকদের আয় গড়ে ৮১ শতাংশ কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি পরিবহন খাতে শ্রমিকদের ৯৬ শতাংশ ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে শ্রমিকদের ৮৩ শতাংশ আয় কমেছে।

লকডাউনের আগে মাসিক গড় আয় ছিল ১৩ হাজার ৫৭৮ টাকা। লকডাউন সময়ে তা নেমে আসে ২ হাজার ৫২৪ টাকায়। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ টাকা। অর্থাৎ লকডাউন-পরবর্তী সময়েও আয়ে ৮ শতাংশ ঘাটতি থাকছে।

লকডাউনে শ্রমিকদের পরিবারে আয় এবং ব্যয়ের ঘাটতি ছিল প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ পরিবহন খাতে এবং সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ খুচরা দোকান বিক্রেতা খাতে।

২০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার সম্পত্তি বিক্রি, খাবার কমিয়ে দেয়া এবং সন্তানদের কাজে পাঠানোর মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছে। এছাড়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার ধার করে এবং সঞ্চয় কমিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছে।

লকাডাউন-পরবর্তী সময়ে সঞ্চয় কমেছে ৬৪ শতাংশ। আর সঞ্চয়কারীর সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশ।

এছাড়া লকডাউনে এই তিন খাতের শ্রমিকদের মাত্র ১ শতাংশেরও কম সরকারি সহায়তা পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কম মূল্যে খাদ্য সহায়তা ও নগদ টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৬ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের টিকা নিয়েছেন। বাকি ৬৪ শতাংশ টিকার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের মধ্যে পরিবহনের ৬৭ দশমিক ৯, হোটেল-রেস্তোরাঁর ৬৫ দশমিক ৯ ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ৫৭ দশমিক৬ শতাংশ শ্রমিক এখনো টিকা নেয়নি।

বিলসের সুপারিশ

গবেষণা প্রতিবেদনে পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকান শ্রমিকদের সুরক্ষায় ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সেগুলো হলো- বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনার আওতায় এ খাতের শ্রমিকদেরকে ক্রমান্বয়ে পেশা উল্লেখসহ পরিচয়পত্র দিতে হবে।

দুর্যোগকালীন বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের সহায়তার জন্য সঠিক ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অগ্রাধিকারভিত্তিতে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদেরকে করোনা টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

শ্রমিকদের সামাজিকভাবে সুরক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে বিমা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।

যেসব শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন তাদের একটি সময় পর্যন্ত বেকার ভাতা দেয়া, রেশনের ব্যবস্থা, দুর্যোগকালীন সময়ে ব্যাংকের ঋণের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল, নিয়োগপত্র প্রদান এবং তিনটি সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন শক্তিশালী ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

এ বিভাগের আরো খবর