দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের বিস্তার রোধে নতুন করে জারি করা বিধিনিষেধে রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে চাইলে ভোক্তাকে অবশ্যই করোনা টিকা গ্রহণের সনদ দেখাতে হবে। তবে সরকারের এই নির্দেশনা রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলো মানছে না।
সরকারের নির্দেশনা কার্যকরের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ২০ থেকে ৩০টি রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এমনকি টিকা সনদ ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে দেয়া যাবে না- এমন নির্দেশনাও পায়নি রেস্তোরাঁ মালিক-কর্তৃপক্ষ।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে চাইলে ভোক্তাকে করোনা টিকা গ্রহণের সনদ দেখাতে হবে- এমন নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
রাজধানীর বাটা সিগনাল স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, খাবার খেতে আসা অধিকাংশ ভোক্তার টিকা সনদ নেই। রেস্টুরেন্ট থেকেও জানতে চাওয়া হচ্ছে না-সংশ্লিষ্ট ভোক্তার টিকার সনদ আছে কি না।
স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বললেন, ‘করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। কিছুদিন হলো রেস্তোরাঁয় ক্রেতা আসা শুরু হয়েছে। এখন নতুন করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা আমাদের ব্যবসায় ধস নামাবে। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করা। তারপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। তা না হলে শুধু শুধুই ভোগান্তি বাড়বে।’
দুপুর সাড়ে ১২টায় কাঁটাবন গ্লোরিয়াস রেস্টুরেন্টে গিয়েও অভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। টিকা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকার জন্য নিবন্ধন করেছি কিন্তু এখনও টিকা পায়নি। তাই বলে কি আমি হোটেলে খাওয়া বন্ধ করে দেব?’
স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বললেন, ‘করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। কিছুদিন হলো রেস্তোরাঁয় ক্রেতা আসা শুরু হয়েছে। এখন নতুন করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা আমাদের ব্যবসায় ধস নামাবে। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করা। তারপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। তা না হলে শুধু শুধুই ভোগান্তি বাড়বে।’
গ্লোরিয়াস রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের ২০ জন কর্মচারী রয়েছে যাদেরা অধিকাংশই এখনও টিকা পায়নি। তবু সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা মানার চেষ্টা করছি। যারা খাবার খেতে আসছেন তারা টিকা নিয়েছেন কীনা জিজ্ঞাসা করছি। এই প্রশ্নটা সবাইকে এমন প্রশ্ন করাটাও কেমন যেন লাগে!
‘আমাদের রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের বলে দেয়া হয়েছে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী টিকা নিতে। গ্লোরিয়াস রেস্টুরেন্ট মালিক বলেন, ‘টিকা সনদ ছাড়া রেস্টুরেন্টে ক্রেতা খাবার খেতে পারবে না এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
নিউ চিংড়ি চাইনিজ রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক হজরত আলী মিন্টু বলেন, করোনা শুধু কি রেস্টুরেন্টগুলোতে? অন্য কোথাও নেই? অধিকাংশ জায়গায় মানুষ করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। তাহলে টিকা সনদ দেখানোর বিষয় শুধু রেস্তোরাঁয় থাকবে কেন? এটা রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে শেষ করে দেয়া ছাড়া আর কিছু না।’
একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর তোপখানা, পল্টন ও মতিঝিল এলাকার বেশকিছু রেস্তোরাঁয়।
বেলা ২টার দিকে তোপখানা রোডে রোজ ক্যাফে বৈশাখী রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায় একসঙ্গে ২০ জনের বেশি মানুষ খাওয়া-দাওয়া করছে। তাদের অধিকাংশই টিকা সনদ সঙ্গে নিয়ে আসেনি। রহমান নামের এক ভোক্তা বললেন, ‘বাইরে বের হওয়ার সময় টিকার সনদ নিতে মনে নাই। তাছাড়া এই সনদ কি সব সময় সঙ্গে রাখা যায়!’
এই রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতাদের চাপ দিয়ে টিকার সনদের বিষয় বলা যায় না। এলে জানতে চাচ্ছি। কেউ জানান টিকা নিয়েছেন। কেউ জানান যে নিতে পারেননি। আবার অনেকে জানান যে টিকা নিতে পারেননি। অনেকেই বলছেন নিবন্ধন করে টিকা পাননি। কী করব বলেন? ব্যবসা তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এই নির্দেশনা আসলে বাস্তবসম্মত নয়। তবে যেহেতু সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছে তা মানতে আমরা বাধ্য। একইসঙ্গে সরকারের কাছে আমরা আবেদন জানাই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা করতে চাই। রেস্তোরাঁগুলোতে শ্রমজীবী মানুষ বসে খাওয়া–দাওয়া করেন। তাদের টিকার সনদ যাচাই করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘শুরুর দিকে একটু চ্যালেঞ্জিং হবে। আস্তে আস্তে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।’
অনেক রেস্তোরা মালিক সরকারের এই নির্দেশনা এখনও হাতে পাননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব রেস্তোরাঁ ও হোটেল আমাদের সদস্য নয়। সদস্যরা গতকালই নির্দেশনা পেয়ে গেছে। তবে বাকিগুলোতেও নির্দেশনা পৌঁছে দিতে কাজ করছি।’
টিকার সনদ ছাড়া রেস্টুরেন্টে না যাওয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরুতে চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের আমরা কাগজের একটি কার্ড দিচ্ছি যেটা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। কার্ডটি নিজেদের কাছে রাখতে হবে। প্রমাণ হিসেবে কার্ডটি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
রেস্টুরেন্টে প্রবেশের আগে ভোক্তার টিকা কার্ড আছে কি না তা কতটা নিশ্চিত করা যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে একটু চ্যালেঞ্জিং হবে। আস্তে আস্তে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।’