বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ও সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওই ইউনিয়নের সদস্য সাইদুল আলম লিটন ও তার অনুসারী স্থানীয় যুবক জাহিদ হোসেন জয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত ও বিরক্ত করে থাকেন। তাদের হাতে মারধরেরও শিকার হন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এর আগেও এই দুই ব্যক্তির দ্বন্দ্ব হয়েছে একাধিকবার। পূর্বে একটি দ্বন্দ্ব বড় আকারও ধারণ করেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন, এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার। পাশাপাশি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও ঝামেলা মুক্তভাবে বাঁচতে চাইছেন।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, লিটনের নিয়ন্ত্রণাধীন শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগারেই লিটন ও তার অনুসারীদের আড্ডা। পাঠাগারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষা আনন্দ বাজারে। শিক্ষার্থীদের এই বাজারে যাতায়াত প্রতিনিয়ত। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তাদের সঙ্গে লিটন ও জয়ের ঝামেলা বাধে। সব ঘটনা তেমন বড় আকার না ধারণ করলেও হাতাহাতির মত ঘটনা ঘটেছে বহুবার।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেড়াতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী ও তার স্বামীকে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লিটন ও জয়ের বাড়ি এবং স্থানীয় একটি ক্লাবে হামলা চালায়। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম নিউজাবাংলাকে বলেন, ‘ইউপি সদস্য লিটনের অনুসারী জয় আনন্দ বাজার এলাকায় চিহ্নিত বখাটে। নেশাসক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত থেকে শুরু করে ছাত্রদের অকারণে বিভিন্ন সময় মারধরও করেছে।
‘অনেক দিন ধরেই আমরা বিষয়টির সমাধান চেয়ে আসছিলাম। কিন্তু কেউই সমাধান দিচ্ছিল না। সর্বশেষ আমাদের এক সিনিয়র আপু ও তার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত কাউকেই পাইনি। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
বাংলা বিভাগের ছাত্র সৈয়দ রুমন বলেন, ‘লিটন মেম্বারের প্রত্যক্ষ মদদে জয় ও তার অনুসারীরা এমনটা প্রতিনিয়ত করে আসছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। ক্যাম্পাসের সামনে চা খেতে গেলেও তারা বিরক্ত করে। আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি এই দুইজনের জন্য।’
‘আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে লিটন ও জয়। এদের বিরুদ্ধে স্থায়ী অ্যাকশন নেয়া দরকার।’
মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ভাঙচুর করিনি, ওরা নিজেরা ওই পাঠাগারে থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভাইর ছবি ভাঙচুর করে আমাদের নাম দিয়েছে। এটা আরও বড় অন্যায় করেছে।’
আহম্মেদ ফয়সাল নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জাহিদ হোসেন জয় নামের যে ছেলেটি রয়েছে, এর কাজই হচ্ছে সকাল হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা সংলগ্ন দোকানগুলোতে বসে চা ও সিগারেট খাওয়া। ওই দোকানগুলোতে বসেই ইভটিজিংসহ যা ইচ্ছা তাই করে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাও রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে কিছু বলে না। এদের আবার মদদ দিয়ে থাকে মেম্বার লিটন।’
এর আগেও লিটন ও জয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে আনন্দ বাজার এলাকায় তাদের অনুসারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছিল।
বার বার এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ ওই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও। কারণ কোন ঘটনা ঘটলে তাদের এলাকায়ও হামলার-ভাঙচুর চালায় কোনো না কোনো পক্ষ। তাই তারাও নিস্তার চান এসব ঝামেলা থেকে।
আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ শাওন বলেন, ‘লিটন মেম্বারের আস্কারায় জয় যত অপকর্ম আছে সবই এলাকায় করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা বাধায়। নেশা করলে যা অবস্থা হয়, সেই অবস্থাই জয়ের। তার বাহিনীও রয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়াও রয়েছে। এ সব বিষয় নিয়ে আমরাও বেশ বিরক্ত।’
রবিউল ইসলাম নামে আরেক এক বাসিন্দা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের তো কোনো দ্বন্দ্বের বিষয় নেই। এলাকায় এ সব ঝামেলা হচ্ছে লিটন মেম্বার ও তার অনুসারী জয়ের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিটন মেম্বার বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখের অনুসারী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপরেও সেই প্রভাব বিস্তার করতে চায়। কিন্তু তারা মাথায় রাখে না যে, তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা পাঁকালে সেটার ফল পুরো গ্রামবাসীকে ভুগতে হয়। আমরা এলাকাবাসী সহজ সমাধান চাচ্ছি এসব বিষয় থেকে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী ও তার স্বামীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ইতিমধ্যে জয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে লিটনকে মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে লিটনের মা নূরজাহান বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে লিটন মঙ্গলবার রাতের ঘটনার সময় ওইখানে ছিলে। সে ঝামেলা মিটমাট করতে চেয়েছিলে। এখন তার দোষ পড়েছে ঝামেলার জন্য।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে লিটনের দ্বন্দ্ব রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেই দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনান হয়েছে। আমাদের ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এমনকি আমাদের মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘ইউপি সদস্য সাইদুল আলম লিটনের আচরণ জনপ্রতিনিধিসুলভ নয়। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ‘লিটন ও জয়ের বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে সেই মামলায় মাদারীপুর থেকে জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অভিযোগ পেলে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।’