হবিগঞ্জ সদরে মসজিদের নাম পরিবর্তন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আফজাল চৌধুরী নামে একজন নিহতের ঘটনায় প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামের লন্ডন প্রবাসী সাইফুল ইসলাম সেফুলের লোকজন হামলা চালিয়ে গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে গ্রামের নারী ও শিশুরা হাওরে পালিয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের পূর্ব ফাদ্রাইল গ্রামে গত বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ৯ জানুয়ারি গ্রামের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সেফুলের দলের আফজাল নিহত হন। এর জেরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ হামলা চলে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তাদের দাবি, নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
হামলাকারীরা গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। ছবি: নিউজবাংলা
গ্রামবাসীর অভিযোগ, আফজাল নিহতের পর থেকেই গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এ সুযোগে বুধবার বিকেলে সাইফুল ইসলাম সেফুলের লোকজন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়।
হামলার সময় গ্রামের নারী ও শিশুরা জীবন বাঁচাতে হাওরের পালিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা লুটপাট ও ভাঙচুর করে।
তারা আরও জানায়, হামলাকারীরা গ্রামের সাধন চৌধুরী, শাহাজাহন চৌধুরী, তাউস চৌধুরী, গাউছ চৌধুরী, আওয়াল চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আবদাল চৌধুরী, জাহির চৌধুরী, সামছুল চৌধুরী, হাজী ইমন চৌধুরী ও কালো চৌধুরীর বাড়িসহ অন্তত ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর করে।
তবে গ্রামে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত আফজাল চৌধুরীর ভাই তজল মিয়া চৌধুরী বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এমনিতেই আমরা ভাইকে হারিয়ে শোকে কাতর। আমাদের অধিকাংশ লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
‘এখন পর্যন্ত আমরা এ ঘটনায় মামলাই করতে পারিনি, বাড়িঘর ভাঙচুর করব কিভাবে? তারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর ভাংচুর করে আমাদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলার খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বেশ কিছু বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
‘আমরা সেখানে যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে। তবে এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ নিহতের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানা ওই পুলিশ সদস্য।
হামলায় আতঙ্কে গ্রামের অধিকাংশ নারী ও শিশুরা বাড়ি ছেড়ে হাওরে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৪ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগে পূর্ব ফাদ্রাইল জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্প্রতি মসজিদটি নতুনভাবে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কাজও প্রায় শেষ দিকে।
মসজিদ পুননির্মাণের টাকা দেন একই গ্রামের লন্ডন প্রবাসী সাইফুল ইসলাম সেফুল। এ কারণে তিনি মসজিদের নাম পরিবর্তন করে তার বাবার নামে করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সেফুলের বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে।
এ দিকে এলাকার পাঁচপিরের মাজারে গত রোববার থেকে ওরস শুরু হয়। ওরস চলার সময় সোমবার রাতে মসজিদের নাম পরিবর্তন নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে অন্তত ১১ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সেফুলের পক্ষের আফজালকে মৃত ঘোষণা করেন।
আফজাল চৌধুরী গ্রামের জামাল উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ের গাড়িচালক ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন।