দুর্নীতির দুই মামলায় জামিন আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। ফলে রফিকুল আমীনকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সাঈদ আহমেদ রাজা। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।
পরে সাঈদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজাই হলো ১২ বছর। অথচ তিনি তার থেকেও বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া যে গাছ বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা দিতে আদালত বলেছিল, সেই গাছ আর পাইনি। এ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জামিন প্রার্থনা করেছিলাম। আদালত রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।’
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আপিল বিভাগ তাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দিয়েছিল। তবে কোনো শর্তই তিনি পূরণ করতে পারেননি। তাই আপিল বিভাগ তার জামিন আবেদন খারিজ করে। পরে সেই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করলে আপিল বিভাগ আজকে তা খারিজ করে দিয়েছে।
‘এর ফলে তার জামিন আবেদন খারিজের আদেশ বহাল থাকল। আর টাকা ফেরত দিতে তার শর্তসংক্রান্ত যে আদেশ ছিল সেটাও বহাল থাকল। সর্বোপরি আগের শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত তার কারামুক্তি মিলছে না।’
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দুটি করে দুদক। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে ১৯ জনকে এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৪৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। যার মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
আর মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
পরবর্তী সময়ে বিচারিক আদালত ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুই মামলায় আসামিদের বিচার শুরু করে। তবে অভিযোগ গঠন হওয়ার আগেই ট্রি প্ল্যান্টেশনের অর্থ আত্মসাতের মামলায় পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান রফিকুল আমীন। তবে দুদক হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে সে জামিন স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে দুদকের আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে রফিকুল আমীনকে জামিন দেয়। যেখানে শর্ত দেয়া হয় যে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা অন্য কোনোভাবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করতে হবে।
কোনো শর্তই পূরণ করতে না পারায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন আটকে যায় এবং তাদের কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।