বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবাসীর এক জীবন বিমায় হুমকিতে ছয় জীবন

  •    
  • ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:২০

শতভাগ বোনাসের আশায় একটি জীবন বিমা করেছিলেন প্রবাসী আমির হোসেন। কিন্তু ১০ বছর পর লভ্যাংশসহ টাকা তুলতে গিয়ে এখন জীবন-সংকটে তিনি।

সৌদি আরব প্রবাসী আমির হোসেন। দশ বছর আগে দেশে এসে একটি জীবন বিমা করেছিলেন। এবার হিসাব চাইতে গিয়ে বিমা কর্মকর্তার মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তার।

আমিরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও মা-বাবা। জীবন বিমায় প্রতারিত হয়ে এখন তাদের সবার চোখেই অন্ধকার।

অভিযুক্ত বিমা কর্মকর্তা নুরুল আলম মিন্টুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে তিনি এখন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ডাকবাংলা শাখার ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড ইনচার্জ তিনি।

অন্যদিকে, প্রবাসী আমির হোসেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সফরপুর গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি সৌদি আরব থেকে ৫ মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে এখন পাগলপ্রায় দশা হয়েছে আমিরের। ছেলের দুর্ভাগ্য নিয়ে আহাজারি করছেন তার বৃদ্ধ মা। পুরো বাড়িতেই শোকের মাতম।

স্ত্রী সালমা আক্তার অভিযোগ করেন, ২০১১ সালে প্রবাস থেকে দেশে ফিরলে নুরুল আলম মিন্টুর পীড়াপীড়ি ও শতভাগ বোনাসের প্রলোভনে একটি জীবন বিমা করেছিলেন আমির।

প্রতি বছর ২২ হাজার ৬০ টাকা করে টানা ১০ বছর বিমার কিস্তি পরিশোধ করার পর এবার লভ্যাংশসহ টাকা তুলতে গেলে টালবাহানা শুরু করেন মিন্টু। শুধু তাই নয়, আমিরকে আরও একটি বিমার প্রস্তাব দেন তিনি।

এবারে বলা হয়- আগের বিমার লভ্যাংশসহ পাঁচ লাখ জমা রাখলে ৬ বছর পর ১০ লাখ টাকা পাবেন তিনি।

প্রস্তাবে রাজি হয়ে নতুন বিমাটিও করেন আমির। কিন্তু টাকা ঠিকমতো জমা হয়েছে কি না জানতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ডাকবাংলা অফিসে গিয়ে হাজির হন তিনি।

বিমা কোম্পানি থেকে আমিরকে জানানো হয়, ৫ লাখ টাকা নয়, তার নামে ৮০ হাজার টাকা কম জমা পড়েছে।

পরে বিষয়টি নিয়ে বিমা কর্মকর্তা মিন্টুর কাছে ব্যাখা চান আমির। কিন্তু কোনো সদুত্তর না দিয়ে আমিরকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন মিন্টু। এ সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমির।

এ বিষয়ে আমির হোসেন বলেন, ‘আমি তার কাছে টাকার হিসাব চাইলে সে আমাকে মারধর করে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে আমার মাথায়ও আঘাত করা হয়। পরে পরিবারের লোকজনের কাছে শুনেছি আমি বেশ কয়েক দিন পাগলের মতো ছিলাম। আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে তখন।’

তিনি বলেন, ‘জীবন বিমা করেছি জীবনের নিরাপত্তার জন্য। এখন আমার পরিবারের ছয়জনের জীবন অনিশ্চিত। ছুটির মেয়াদ শেষ; আমি কীভাবে আবার বিদেশ যাব জানি না।’

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পার্শ্ববর্তী একটি ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী মো. হারুন জানান, শুধু আমির নয় প্রতিদিনই ডাকবাংলা অফিসে এমন ঘটনা ঘটছে। সেদিন আমিরকে তিনি নিজ চোখেই মারতে দেখেছেন।

এই ঘটনায় মামলা হলেও মাত্র এক দিন জেল খেটে বেরিয়ে যান মিন্টু। আমিরের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।

মিন্টু দাবি করেন, তাকে মারতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে যান আমির। তিনি বলেন, ‘টাকা কম দেয়ার সুযোগ নেই। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।’

স্থানীয় মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফারইস্টের এমন অভিযোগ শুধু ফেনীর ডাকবাংলায় নয়, অন্য শাখাগুলোতেও হচ্ছে। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডাকবাংলা শাখার ক্যাশ অফিসার মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তবে নুরুল আলম মিন্টু যে কাজ করেছেন তা ঠিক হয়নি। কারণ গ্রাহকরা আমাদের লক্ষ্মী।’

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গেছে। তদন্ত করেছে। মামলা হওয়ার পর আসামিকেও গ্রেপ্তার করেছে। এখন আসামি জামিনে বেরিয়ে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর