নিরাপদ অভিবাসন করা গেলে গ্লোবাল জিডিপি দ্বিগুণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এজন্য বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত। তাদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) আরব দেশগুলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে তৈরি করেছি। আমি মনে করি, আমার দাবি ভুল নয়।
‘বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের জন্যও নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন প্রয়োজন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে খরচ একটি বড় বাধা। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বৈশ্বিক জিডিপি দ্বিগুণ হতে পারতো যদি সবাই নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ পেত। বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরও অভিবাসন প্রয়োজন।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘করোনার সময় অভিবাসীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যদিও এখন তা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন তারা।
‘বাংলাদেশ সবসময়ই অভিবাসন খাতে চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বিশ্ব ফোরামে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। অভিবাসনকে আমরা জাতীয় নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছি। অভিবাসীদের নিরাপদ পরিবেশ দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের দূতাবাস এবং হাইকমিশনগুলো বিভিন্ন দেশে কাজ করেছে। বাংলাদেশিদের জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে তারা কাজ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিবাসী কর্মীরা মহামারির মধ্যে আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। অবশেষে অভিবাসনের খরচ কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
নারী অভিবাসন কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমরা দেখেছি, নারী কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হতো। আমি মনে করি, সে অবস্থা এখন আর নেই। আমরা নারী কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পেরেছি।’
নারীদের অভিবাসনের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীদের নিরাপদ অভিবাসনের বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এ কাজে অংশীজনদের পাশপাশি মিডিয়াকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার সময় ফেরত আসা কর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। শুধু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সেই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এই ব্যাংকের শাখা উপজেলা পর্যায়ে নেই। তাই ফেরত আসা কর্মীদের অনেকেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। ’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘ফেরত আসা কর্মীদের কাছে এই টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য ব্যাংকের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।’
আশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভালো খবর হলো কর্মীদের জন্য বিভিন্ন দেশের দুয়ার খুলছে। আমাদের সরকার টু সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতে অভিবাসন খরচ কমে আসবে।’
‘এখনও আমাদের কর্মীরা বেতন অনেক কম পান। কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মতো নীতিগত দৃষ্টি দেয়ার সময় এসেছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ অভিবাসনকে জোরালোভাবে নীতিমালায় আনার জন্য গবেষণার প্রশংসা করেন।
সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সুজান মুলার জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অভিবাসনের গুরুত্বের জন্য দেশটি এ বিষয়ে নীতি গবেষণার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ২০ জেলায় বিস্তৃত ছয় হাজারের বেশি পরিবারের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্যানেল জরিপের ফল উপস্থাপন করে রামরু।