নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসন কারও পক্ষ নেবে না- এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি-সুনাম বাড়বে।
আগামী শনিবারের ভোটকে সামনে রেখে বুধবার বন্দরনগরে এক পথসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
এই নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াৎ আইভীর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে দাবি করে হাতি মার্কার প্রার্থী বলেন, এ কারণে পুলিশ এখন তার দলের কর্মী-সমর্থকদেরকে হয়রানি করছে।
বিএনপি নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনি নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে জানেন এবং চেনেন। আপনাকে আমরা সবনিয় অনুরোধ করছি নারায়ণগঞ্জের মানুষের যেন আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।
‘নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এবং কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে মানুষের আশা আকাঙক্ষা যেন বিঘ্নিত না হয়। এমনটা যদি করতে পারেন এতে আপনার সুনাম বৃদ্ধি পাবে এবং ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।’
বুধবার নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের খানপুর হাসপাতাল সামনে এক পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী এখন আর বাসায় থাকতে পারছে না। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে।
‘এতদিন পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, এখন যারা রাজনীতিবিদ তাদেরকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে।’
সরকারি দলের মধ্যে বিভাজন আছে এমন মন্তব্য করে তৈমূর বলেন, ‘নির্বাচনে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তায় তাদের মধ্যে যে বিভাজন রয়েছে সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এতে করে সরকারদলীয় প্রার্থীর মধ্যে এখন হতাশা বিরাজমান। এই হতাশা থেকেই পুলিশি নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘পুলিশের হয়রানির’ কারণে জনমত এখন তাদের পক্ষে জানিয়ে হাতি মার্কার প্রার্থী বলেন, ‘এই পুলিশি নির্যাতন, সরকারি নির্যাতন যতই বৃদ্ধিপাবে ততই আমাদের প্রতি জনসমর্থন বাড়বে। এতে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঐক্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াইয়ের একটি আমেজ তৈরি হয়েছে।
২০১১ সালে তৈমূরকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল। তবে আইভীর সঙ্গে শামীম ওসমানের সে সময়ের লড়াইয়ের মধ্যে দলটি শেষ পর্যন্ত থাকতে চায়নি। ভোটের আগের রাতে তৈমূরকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় হয়।
২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকের প্রথম ভোটে বিএনপি মনোনয়ন দেয় সাখাওয়াত হোসেন খানকে। তিনি হেরে যান ৮০ হাজারের মতো ভোটে। সব মিলিয়ে সিটি করপোরেশনে তৃতীয় আর দলীয় প্রতীকের দ্বিতীয় নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও তৈমূর জানান, তিনি চ্যালেঞ্জ করবেন আইভীকে।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও বিএনপি বর্জন করেছে। তবে গত ২ নভেম্বর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তার দলের নেতারা স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে অংশ নিলে তাদের আপত্তি নেই।
তৃতীয় ধাপে বিএনপির ৯৬ জন, চতুর্থ ধাপে ৯৮ জন আর পঞ্চম ধাপে ৮৩ জন নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেও স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপি লড়াই করছে কি না, এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিএনপি তৈমূরের সব দলীয় পদ কেড়ে নেয়।
তার পরেও এক ধরনের দলীয় আমেজ পাওয়া যাচ্ছে এই নির্বাচনে।
তৈমূর মনে করেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত হবে।
নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে গণমুখি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবের জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই নগরী হবে একটা নিরাপদ নগরী। নগরী গড়ে তোলা হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। একটা আধুনিক নগরী, যেখানে সব সেবা ও সুযোগ সুবিধা থাকবে। অসম্প্রদায়িক নগরী হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে গড়ে তোলা হবে।’