বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর স্থান নিয়ে ধূম্রজাল

  •    
  • ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৪৬

আশিক চৌধুরীর দাবি, তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে লন্ডনে। তবে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, ‘হারিছ দুই/তিন মাস আগে ঢাকায় মারা গেছেন। ঢাকায়ই তাকে দাফন করা হয়েছে।’

বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা। হাওয়া ভবন-ঘনিষ্ঠ এই নেতা আলোচনায় থাকতেন সব সময়। দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হঠাৎ করেই তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যান। এরপর থেকে ছিলেন আড়ালে। এবার মৃত্যুর খবরের মধ্য দিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে পালিয়ে রয়েছেন- এতদিন এমন তথ্যটুকুই জানা গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার জানা গেল, তিনি মারা গেছেন। তাও তিন মাস আগে।

মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানান তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী।

তবে হারিছ চৌধুরী কোথায় মারা গেছেন এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আশিক চৌধুরীর ভাষ্য মতে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে মারা যান হারিছ। সেখানেই তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যারা থাকেন।

হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী, ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির অন্য কোনো নেতাও কথা বলতে রাজি হননি। ফলে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও দাফনের স্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হারিছ দুই/তিন মাস আগে ঢাকায় মারা গেছেন। ঢাকায়ই দাফন করা হয়েছে তাকে।’

হারিছ চৌধুরীর পরিবারের কাছ থেকেই এমন তথ্য জেনেছেন দাবি করে শামীম বলেন, ‘ঢাকার কোন জায়গায় মারা গেছেন তা আমি জানি না। তাছাড়া এসব ব্যাপারে কথা বলাটাও ঝুঁকিপূর্ণ।’

সিলেট বিএনপির আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমিও শুনেছি তিনি ঢাকায় মারা গেছেন। এ কারণেই হয়তো এতদিন তার পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। দলের পক্ষ থেকেও কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। হারিছ চৌধুরী গোপনে দেশেই অবস্থান করার তথ্য শুনেছি।’

আবুল কাহেরের এমন বক্তব্য নাকচ করে হারিছের ভাই আশিক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি যুক্তরাজ্যেই মারা গেছেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর হারিছ চৌধুরী আর দেশে আসেননি। তার পরিবারের সব সদস্যই সেখানে থাকেন।’

মৃত্যুর খবর এতদিন গোপন রাখা প্রসঙ্গে আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গোপন করা হয়নি। আত্মীয়স্বজন সবাই জানে। দলের মধ্যে যারা খোঁজখবর নিয়েছেন তাদেরও জানানো হয়েছে। এখন কেউ ওনার খোঁজ রাখেন না বলে তার মৃত্যুর খবরও জানতে পারেননি।

‘ভাইয়ের কথা মনে পড়ায় মঙ্গলবার তার ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলাম। এরপর অনেকে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মিডিয়াও ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে।

আশিক চৌধুরী মঙ্গলবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন।’

নিজের ছবির সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে আশিক এই স্ট্যাটাস দেন। এরপর স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ‘ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন’ লিখে কমেন্ট করতে থাকেন। অনেকে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে আফসোসও করেন।

আশিক চৌধুরী জানান, গত বছরের আগস্টের মাঝামাছি হারিছ চৌধুরী লন্ডনে করোনা আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। কয়েক দিন পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভও আসে। করোনার ধকল সাময়িক কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ‌একপর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান হারিছ চৌধুরী।

হারিছ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে। তবে পরিবারের সবাই ইংল্যান্ডে থাকেন। বাড়িতে কেউ থাকেন না। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

চারদলীয় জোট সরকারের এই ক্ষমতাশালী নেতার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর ঢাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে গ্রামের বাড়িতে আসেন হারিছ। ওই রাতেই যৌথ বাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাকে পায়নি।

হারিছ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, ওই অভিযানের পর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হারিছ। আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে নানার বাড়িতে ওঠেন।

এরপর পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও প্রকাশ পায়। ইরানে কয়েক বছর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি বিদেশে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি হারিছ চৌধুরীকে লাপাত্তা দেখানো হয়।

গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়।

এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই মামলা বিচারাধীন।

এ বিভাগের আরো খবর