দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক প্রমাণ দিয়ে পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর টানা পঞ্চম দিনে তা হয়ে গেল দ্বিগুণ।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে হয়ে গেছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
শনাক্তের এই হার গত ৩১ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংক্রমণ হারের পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও এই ছয় দিনে ক্রমেই বেড়েছে। গত ৭ জানুয়ারি তৃতীয় ঢেউ আঘাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার দিন ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যেখানে ছিল ১ হাজার ১৪৬ জন, সেটি গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ছুঁইছুঁই হয়ে গেছে।
এই সময়ে সারা দেশে রোগী পাওয়া গেছে ২ হাজার ৯১৬ জন, যা গত ১ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় দেশে রোগী পাওয়া যায় ৩ হাজার ৬২ জন।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ১ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৪ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২৭ হাজার ৩৯৯ জন। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা কম হলেও রোগী বেড়েছে পাঁচ শর মতো।
রোগী বাড়লেও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণেই আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে চারজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১১১ জনের।
দেশে করোনার সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর দুটি ঢেউয়ের আঘাত সামলেছে দেশ। এখন তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাত সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থেকে এর নিচে নেমে এলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। উল্টোপথে যাত্রা অর্থাৎ সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে থেকে ৫ ছাড়ালে পরবর্তী ঢেউ আঘাত হেনেছে ধরা হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর।
গত ৬ দিন ধরে করোনার রোগী ও সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে
এর পর থেকে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ক্রমেই কমছিল। একপর্যায়ে ২ শতাংশের নিচে নেমে ১ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে। তবে শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২ ছাড়িয়ে ৩ এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাথমিক প্রমাণ মেলে গত ৭ জানুয়ারি। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে সংক্রমণের হার। তবে শুক্রবার মানুষ কম পরীক্ষা করাতে আসায় শনিবার সাধারণত রোগী কম পাওয়া যায়। ৮ জানুয়ারির ওই এক দিনই ২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তবে শনাক্তের হার বেড়েছিল।
৭ জানুয়ারি সারা দেশে রোগী পাওয়া যায় ১ হাজার ১৪৬ জন। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
৮ জানুয়ারি দেশে রোগী পাওয়া যায় ১ হাজার ১১৬ জন। শনাক্তের হার বেড়ে হয় ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
৯ জানুয়ারি দেশে রোগী পাওয়া যায় ১ হাজার ৪৯১ জন। শনাক্তের হার বেড়ে হয় ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
১০ জানুয়ারি রোগী দুই হাজার ছাড়িয়ে হয় ২ হাজার ২৩১ জন। শনাক্তের হার আরও বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
১১ জানুয়ারি রোগী পাওয়া যায় ২ হাজার ৪৫৮ জন। সেদিন শনাক্তের হার আরও বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
রোগী ও শনাক্তের হার ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আবার বিধিনিষেধে যাচ্ছে দেশ। গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাস্ক ছাড়া বাইরে গেলে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা এসেছে। টিকার কার্ড ছাড়া রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে না, স্কুল-কলেজে ক্লাসও করা যাবে না।