শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হবিগঞ্জে বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কের সংখ্যাও। গর্ভবতী নারীদেরও দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা।
রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই হাওর ও প্রত্যন্ত এলাকার। ভুগছেন জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে।
গত ডিসেম্বরে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর কোনো হিসাব সেখানে নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় থেকে জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৫৯টি। তার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক। এ কারণে একই বেডে দুজন করে, ওয়ার্ডে মেঝেতে, বারান্দায় তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়ার অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের। শয্যা সংকট, সুচিকিৎসা না পাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে প্রতিদিনই তারা অভিযোগ করছেন।
হবিগঞ্জ শহরের কামড়াপুর এলাকার ফারজানা আক্তার তার চার মাসের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন।
নিউজবাংলাকে ফারজানা বলেন, ‘চার দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। ঠিক সময়ে ডাক্তার, নার্স আসেন না। কোনো প্রয়োজনে নার্সদের ডাকলে উল্টো তারা খারাপ আচরণ করেন।’
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর এলাকার ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার পাঁচ মাসের বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করেছি। হাসপাতালের পরিবেশ খুবই খারাপ। নার্সরা ঠিক সময় চিকিৎসা দেন না। উল্টো আমাদের গালাগালি করেন। এখানকার পরিবেশ একটি গোয়ালঘরের চেয়েও খারাপ।’
কেউ কেউ এমন অভিযোগও করেন, চিকিৎসা নিতে এসে তারা উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
শায়েস্তাগঞ্জের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন ময়না গোমেজ। তার তিন মাসের শিশুর ডায়রিয়া।
তিনি বলেন, ‘এটা দেখে কোনো হাসপাতাল মনে হয়? মনে হয় এটা কোনো ডাস্টবিন। বিছানাগুলোতে চাদর নেই। রক্তসহ বিভিন্ন দাগ আর ময়লা। হাসপাতালের মেঝেতেও ময়লা-আবর্জনা। এটা কোনো হাসপাতালের পরিবেশ হতে পারে?
‘এখানে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়। অথচ হাসপাতালের পরিবেশ দেখে আমরাই অসুস্থই হয়ে যাচ্ছি। শিশুরা কীভাবে সুস্থ হবে?’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বেডের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় আমরা আলাদা বিছানার ব্যবস্থা রেখেছি, যেন তাদের ঠান্ডা না লাগে।’
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিদিনই হাসপাতাল পরিষ্কার করা হয়। তবে রোগীর স্বজনরাই যেখানে-সেখানে পানের পিক আর খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলেন।’