বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভর্তুকির কৃষিযন্ত্রে অতিরিক্ত দাম

  •    
  • ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৪

নওগাঁয় কৃষককে বৈদ্যুতিক মাড়াই যন্ত্রে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা যখন নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ থেকে যন্ত্র কিনছেন, তখন বাজারমূল্যের চেয়ে তা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। কৃষকরা মনে করছেন, ওয়ার্কশপ মালিকদের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে।

নওগাঁয় সরকারি ভর্তুকিতে দেয়া বৈদ্যুতিক মাড়াই (থ্রেশার) যন্ত্র সরবরাহে দাম বেশি ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ মালিকরা যোগসাজশ করে দাম বেশি ধরছেন। বেশি দামের প্রতিবাদ করায় অনেককে বরাদ্দকৃত ভর্তুকির সুবিধার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

৯ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আশরাফুল ইসলাম। তার বাড়ি জেলার বদলগাছী উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে।

অভিযোগে বলা হয়, কৃষির আধুনিকায়নে চলতি অর্থবছর জেলার বদলগাছী উপজেলায় ১০টি পাওয়ার থ্রেশার মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর একটি বরাদ্দ ছিল ওই উদ্যোক্তার নামে। বরাদ্দ আসার পর অফিসে যোগাযোগ করলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাকে জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ থেকে এটি কিনতে হবে।

জেলায় ৮০টির মতো পাওয়ার থ্রেশার মেশিন তৈরির ওয়ার্কশপ থাকলেও মাত্র দুটি ওয়ার্কশপ নিবন্ধনভুক্ত। এগুলো হলো পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাজারের এম আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ও ভাই-ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। এই দুই ওয়ার্কশপের মালিক সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা, আবার তারা পত্নীতলা উপজেলা কৃষি অফিসের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারও আত্মীয়।

কৃষি অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী আশরাফুল ওই দুই ওয়ার্কশপে যোগাযোগ করেন। সেখানে তাকে পাওয়ার থ্রেশার মেশিনের দাম ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বলে জানানো হয়। সরকারের ভর্তুকির ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা তার কাছ থেকে দাবি করা হয়।

আশরাফুল অভিযোগ করেন, একই মানের একটি পাওয়ার থ্রেশার মেশিনের অন্য ওয়ার্কশপগুলোতে দাম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ওয়ার্কশপ থেকে বলা হয়, তারা দাম কমাবেন না, কারণ ভর্তুকির টাকা উত্তোলনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারসহ দপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় ফাইল স্বাক্ষর করাতে তাদের এ অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, দাম কিছুটা কমানোর জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কমে এটা কেনা যাবে না। এ বছর প্রকল্পের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে, চাইলেও আর ভর্তুকির সুবিধা তিনি নিতে পারবেন না।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজার মূল্যের চাইতে দাম বেশি ধরার প্রতিবাদ করায় আমাকে ভর্তুকির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’

বদলগাছী উপজেলার চাংলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ভাই-ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে তিনিও ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে গত মাসের শুরুর দিকে পাওয়ার থ্রেশার কিনেছেন। কৃষি অফিস ও ওয়ার্কশপগুলোর যোগসাজশে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে তার অনুমান। ২০-২২ দিন আগে দড়িয়াপুর গ্রামের কৃষক মামুনুর রশীদ থ্রেশার মেশিন কিনেছেন এম আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে। পরে জেনেছেন বাজারে এর দাম প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা কম। দামে পাওয়া যাচ্ছে। আধাইপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমানও একই রকম বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন এ মেশিন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভাই-ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, দাম বেশি ধরার কারণ অনেক খরচাপাতি আছে। কোন খাতে খরচাপাতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব কথা তো বলা যায় না। আপনাকে বুঝে নিতে হবে।’

এম আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি যেসব যন্ত্রাংশ দিয়ে মাড়াই মেশিন তৈরি করছি, তা অন্য কেউ ওই দামে তৈরি করতে পারবে না। তবে আমার পক্ষে কম দামের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব নয়।’

বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, ‘ভর্তুকির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মেশিন কিনতে পারেনি আশরাফুল ইসলাম, এটা তার ব্যর্থতা। আর দাম কম-বেশি ধরার বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। অধিদপ্তর ও নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ মালিকরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তবে সময়ের মধ্যে অভিযোগকারী মাড়াই মেশিন নিতে পারেননি। মেশিন নিতে না পারায় তিনি বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর