‘সহিংসতা রুখে দিয়ে সকলে আবদ্ধ হোক সম্প্রীতির বন্ধনে’ স্লোগানে শেষ হলো উগ্রবাদবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২২। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হওয়া এই প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন।
এতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজকে হারিয়ে কলেজ পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এবং মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজকে হারিয়ে স্কুল পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) যৌথ আয়োজনে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
গত শনিবার এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ওইদিন হয় স্কুল পর্যায়ের বিতর্ক। এই পর্বে ২৪টি দল অংশগ্রহণ করেন। রোববার হওয়া কলেজ পর্যায়ের বিতর্কেও অংশগ্রহণ করে ২৪টি দল।
আর সোমবার অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিতর্ক। এতে অংশ নেয় ৩২টি দল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি বিতর্কের আয়োজক হওয়ায় স্বচ্ছতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো টিম এই বিতর্কে অংশ নেয়নি।
তিন পর্ব থেকে প্রথম হওয়া দুই দল নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটরিয়ামে ছয় দলের মধ্যে চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
স্কুল পর্যায়ের চূড়ান্ত বিতর্কে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘এই সংসদ সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে পারিবারিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে অধিক গুরুত্ব দিবে।’ বিজয়ী দল ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এই বিতর্কে সরকারি দল হিসেবে অংশ নেয়। মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
স্কুল পর্যায়ে ডিবেটর অফ দ্যা টুর্নামেন্ট এবং চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজের বিতার্কিক কাজি কাভি নেওয়াজ আলোক।
কলেজ পর্যায়ের চূড়ান্ত বিতর্কের বিষয় ছিল ‘এই সংসদ নিপীড়িত, বঞ্চিতের অধিকার আদায়ে সৃষ্ট সহিংসতাকে সমর্থন করে।’ বিজয়ী দল রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এতে অংশ নেয় সরকারি দল হিসেবে আর বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ এই বিতর্কে বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে।
কলেজ পর্যায়ে ডিবেটর অফ দ্যা টুর্নামেন্ট এবং চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের বিতার্কিক মুহতাসিম ফেরদৌস মাহিন।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘এই সংসদ উগ্রবাদ দমনে ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে।’ বিজয়ী দল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি এই বিতর্কের বিষয়ের পক্ষে অবস্থান করে আর বিপক্ষে কথা বলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিবেটর অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিক নকিব বিন ইসলাম এবং চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন অর্জন ত্রিপুরা। তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিক।
ফল ঘোষণার আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সিটিটিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। আলাদা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও তাদের যৌথ আয়োজনে যে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়েছে এটিই হলো কোলাবোরেশন এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ। আর এটিই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মূল উপায়। এ জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপপরিচালক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির চিফ মডারেটর অধ্যাপক ড মাহবুবা নাসরীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আরমান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চলনা করেন ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদা আক্তার তমা।