বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘যারা চোখে দেখে না’, যারা সমালোচনা করছে, তাদের আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘তারা ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক, তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে-যায় না।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি।
তার সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো যারা দেখে না তাদের চোখে হচ্ছে ঠুলি পরা, খুনিদের ঠুলি, যুদ্ধাপরাধীদের ঠুলি। এরা দেশের উন্নয়ন দেখে না।
‘লুটে খেতে পারছে না, সেটাই তাদের বড় কথা। তারা গরিবের হাড্ডিসার, কঙ্কালসার দেহ দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনবে, আর লুটপাট করে খাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহল বলে উন্নয়নের রোল মডেল। আর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, তারা তো ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। এই ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক, তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে-যায় না।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে একটি মহল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বদনাম করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নটা যারা সহ্যই করতে পারে না, তাদের মুখেই ওই কিছু হলো না, কিছুই হলো না। তাদের বলব, নিজেরা আয়নায় একটু চেহারা দেখেন। আর অতীতে কী করেছেন সেটা দেখেন।’
তিনি বলেন, ‘আর যাদের জন্য মায়াকান্না, একটা হচ্ছে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, আরেকটা খুনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আইভী রহমানের হত্যাকারী। সেই হত্যাকারীরা আজকে সব থেকে বেশি সোচ্চার।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা এই সংগঠন নিজের হাতে গড়ে দিয়ে গেছেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে আমরা এই সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছি। আর একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করে।’
উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যারা দুর্নীতি খোঁজেন তাদেরকে বলব ২০০১ সাল থেকে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, যারা ঋণখেলাপির কথা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে এলিট শ্রেণি তৈরি করবার জন্য যে ঋণখেলাপি সৃষ্টি করার কালচার এ দেশে শুরু করেছেন, তার খবরটা আগে নেন।’
ভালো কাজ করার পরও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেগে থাকা একশ্রেণির মানুষের অভ্যাস বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা খুনিদের নিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তাদের কিছু প্রেতাত্মা এখনও সমাজে আছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে। তারাই এগুলো করে বেড়াচ্ছে। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে তথ্য দিচ্ছে।’
দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশ পালিয়ে আছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।’
‘ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না’
জনগণের ভোট চুরি করে কেউ পার পায়নি জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষই তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে।
‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হতাম, তাহলে এই তিন-তিনবার আমরা ক্ষমতায় আসতে পারতাম না। আর আজকে ১৩ বছর পূর্ণ করতে পারতাম না।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের উন্নয়নের চাকাটা গতিশীল থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশে খুনের রাজত্ব করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব করেছিল, দুর্নীতির রাজত্ব করেছিল- তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। এই কথাটা স্পষ্ট জানাতে হবে এদেরকে। পাশাপাশি জনগণের অধিকার নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’
২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের প্রতি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি ৯৬ সালে খালেদা জিয়া কেমন নির্বাচন করেছিল? কয় পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল? ৪ পার্সেন্ট ভোটও পড়েনি। সমস্ত জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে দিয়ে, ভোটের বাক্স সিল দিয়ে ভরে, খালেদা জিয়া নাকি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী।’
জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে খালেদা জিয়ার শেষ রক্ষা হয়নি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কী হয়েছিল তার পরিণতি? গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল, সংগ্রাম হয়েছিল। সেই সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে।
‘আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের আমি স্মরণ করাতে চাই সেই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা। তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পদত্যাগ করতে যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে, জনগণের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না, এটা বাস্তবতা।’
দেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে উঠে আসে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই কালরাতের কথাও।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যে মানুষটার বুক ভরা ভালোবাসা ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আর যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে খেয়ে পরে গেল তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালাল। বাংলাদেশের মাটি তো অনেক উর্বর। এখানে যেমন অনেক ভালো মানুষও জন্মে, আবার পরগাছাও জন্মে। তেমনি বেঈমান পরগাছাও এ দেশে ছিল। তাদের ইচ্ছে ছিল, এ দেশ যেন আর উন্নতি করতে না পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল এরা।’