বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ‘নাটের গুরু’ বৈদ্যুতিক ত্রুটি

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৬

আগুনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং চসিকের এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে অগ্নিকাণ্ডের মূলে বৈদ্যুতিক ত্রুটির তথ্য।

একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে চট্টগ্রামে। চলতি মাসেই এখন পর্যন্ত চারটি এবং গত ডিসেম্বরে সাতটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এখানে। এতে বিপুল সম্পদহানির পাশাপাশি ঘটেছে প্রাণহানিও।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডই ঘটছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক ফরিদ উদ্দিন জানান, গত ১০ জানুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী কর্নেলহাট এলাকায় পিটুপি ফার্নিচারের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে রনি ও শাহাদাত নামে কারখানার দুই শ্রমিক দ্বগ্ধ হয়ে মারা যান।

বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ না হলেও কারখানার মালিক বলছেন কোটি টাকার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকেও বায়েজিদ টেকনিক্যাল মোড়ে আনোয়ারা গার্মেন্টস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিটের ১০টি গাড়ি আধঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি এখনও জানা যায়নি।

এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে উল্লেখযোগ্য অগ্নিকাণ্ডগুলোর মধ্যে ১৯ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ বিশ্বকলোনি এলাকায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে মারা যান রেজিয়া বেগম নামে এক বৃদ্ধা। এ সময় পুড়ে ছাই হয় ৫টি বসতঘরও।

১১ ডিসেম্বর ভোররাতে নগরীর সদরঘাট পশ্চিম মাদারবাড়ি এসআরবি কলোনিতে আগুন লাগে। এতে পুড়ে ছাই হয় ৩৩টি কাঁচাঘর।

এর আগে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামসংলগ্ন হোমল্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের আগুন নেভাতে গিয়ে মিলন নামে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু ঘটে।

এসব অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বলে জানান ফরিদ উদ্দিন।

শুধু ফায়ার সার্ভিসই নয়; চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও চসিকের আগুনের ঝুঁকি শীর্ষক এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে অগ্নিকাণ্ডের মূলে বৈদ্যুতিক ত্রুটির তথ্য।

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চসিকের আওতাভুক্ত ৯টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাঁচ বছরের তথ্য নিয়ে এই গবেষণা চলে। গবেষণাটি গত আগস্টে জার্মানভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, চট্টগ্রামে নগরায়ন বাড়ার সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ২ হাজার ৫১৪টি অগ্নিদুর্ঘটনার ৪৭ শতাংশ ঘটেছে আবাসিক এলাকায় ও ২৭ শতাংশ বাণিজ্যিক এলাকায়। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশই ঘটেছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে।

বাকি ১১ শতাংশ রান্নাঘরের আগুন, ১৩ শতাংশ বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ, ৯ শতাংশ সিগারেটের আগুন ও এক শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা।

প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। এ কারণে গত ৫ বছরে চট্টগ্রামের আগুনে আহত হয়েছেন ৮৩ ফায়ারম্যান। মারা গেছেন ১৫ জন। অগ্নিঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা ও যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় নিঃস্ব হয়েছে হাজারও পরিবার।

চসিকের অগ্নিঝুঁকির গবেষক, চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে। সম্প্রতি শীত শুরু হওয়ার পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। এতে সম্পদহানির সঙ্গে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।’

চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণা সহকারী জিহান ইব্রাহিম বলেন, ‘চসিকের ১৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় কাজ করে মাত্র ৯টি ফায়ার স্টেশন। তাই আমাদের ফায়ার সার্ভিসকে আরও শক্তিশালী করা, তাদের ফায়ার ইকুইপমেন্টের যে অভাব আছে তা অনতিবিলম্বে পূরণ করা উচিত।’

চট্টগ্রামে ওয়ার্ডভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দেয়া হলে অগ্নিদুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন ইব্রাহিম। এ ছাড়া নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম ব্যবহার কমানোর ওপরও জোর দেন তিনি।

বৈদ্যুতিক পিলারগুলো তারের জঞ্জালে পরিপূর্ণ। সেখান থেকে শর্টসার্কিট হয়ে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তা যথাযথ তদারকি করতে হবে।

এ বিষয়ে বিউবো চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু বলেন, ‘ত্রুটি কমাতে চট্টগ্রাম শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মাটির নিচ দিয়ে টানার কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে নিম্নমানের বিদ্যুতের তারের ত্রুটির কারণেই অগ্নিদুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এ জন্য ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর