বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারকেলের ছোবড়ায় অর্ধশত কোটির ব্যবসা

  •    
  • ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩৩

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় বাগান ও বাড়ি থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি শুকনা নারকেল সংগ্রহ করা হয়। এসব নারকেলের ছোবড়া থেকে বছরে আয় হয় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।’

কয়েক বছর আগেও নারকেল ছোবড়াকে আবর্জনা মনে করে ফেলে দেয়া হতো ডাস্টবিনে, তবে এ ছোবড়া এখন আর ফেলনা নয়। আগে কেউ কেউ শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলেও এ ছোবড়ার দাম এখন অনেক।

ছোবড়া প্রক্রিয়াজাত করে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার বাণিজ্য হয় বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ‘কোকো ফাইবার’ সোফার সিট কিংবা জাজিম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

লক্ষ্মীপুরে কোকো ফাইবার প্রক্রিয়াকরণের প্রধান কেন্দ্র সদর উপজেলার দালাল বাজারে। এখানে নারকেলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ছোবড়া ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।

ছোবড়া প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি করা হয় আঁশ। ছবি: নিউজবাংলা

এ ছাড়া জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, চরবংশী, খাসেরহাট, সদর উপজেলার মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া, মীরগঞ্জ, সোনাপুর, কমলনগর উপজেলা হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার ও জমিদারহাটেও ছোবড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে।

এসব এলাকায় ছোট-বড় প্রায় ৩০টির মতো কারখানা রয়েছে। প্রত্যেক কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।

কারখানার শ্রমিক সেলিম জানান, ১০ বছর ধরে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে জাজিম, পাপোশ, দড়ি, সোফা, চেয়ারের গদিসহ বিভিন্ন ধরনের শৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।

এ ছাড়া এখন কোকো ফাইবার নামে ছোবড়ার আঁশ এবং কোকোডাস্ট নামে ছোবড়ার গুঁড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

প্রতিটি কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে কাজ করেন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। ছবি: নিউজবাংলা

রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের নারকেল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানান, কারখানায় প্রতিদিন কয়েক টন ছোবড়া মেশিনের সাহায্যে আঁশে পরিণত করা হয়। এক হাজার নারকেলের ছোবড়ায় কমপক্ষে ৮০ কেজি আঁশ পাওয়া যায়।

একই এলাকার ব্যবসায়ী মো. তোফায়েল জানান, ২ বছর আগেও প্রতিটি নারকেলের ছোবড়া কেনা হতো ৫০ পয়সা দরে। এখন মানভেদে ছোবড়া ৫ থেকে ৭ টাকায় কেনা হয়।

ছোবড়া থেকে আঁশ বা ফাইবার তৈরির পর প্রতি ২০ কেজি ওজনের একেকটি ফাইবার বান্ডেল বিক্রি করে থাকেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। প্রতিটি কারখানায় সপ্তাহে ৪ থেকে ৬ ট্রাক ফাইবার উৎপাদন হয়।

তিনি জানান, প্রতি ট্রাকে কমপক্ষে ২০০ বান্ডেল ফাইবার বহন করা হয়। সব খরচ বাদে কারখানাগুলো মাসে ৫০ হাজারের বেশি টাকা আয় করে থাকে।

ছোবড়া থেকে প্রতিটি কারখানায় সপ্তাহে ৪ থেকে ৬ ট্রাক ফাইবার উৎপাদন হয়। ছবি: নিউজবাংলা

দালাল বাজারের সততা ট্রেডার্সের মালিক মো. জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে ফাইবার নিয়ে অন্য কোম্পানিগুলো তোশকের ভেতরের ম্যাট্রেস বা কয়ার ফেল্ট তৈরি করে। তাই বর্তমানে ছোবড়ার আঁশ বা ফাইবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, ‘নারকেল ছোবড়া থেকে লক্ষ্মীপুরে অনেক কারখানা তৈরি হয়েছে। এতে অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। ছোবড়ার ব্যাপক বাজার তৈরি হওয়ায় জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।’

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় ২ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে নারকেল বাগান রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে নারকেলগাছ।

‘বাগান ও বাড়ি থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি শুকনা নারকেল সংগ্রহ করা হয়। এসব নারকেলের ছোবড়া থেকে বছরে আয় হয় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।’

এ বিভাগের আরো খবর