সোনালি রোদে ফসলের মাঠে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল। ফুলের হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। শীতের হিমেল হাওয়া নাড়া দিয়ে যাচ্ছে হলুদ সেই সৌন্দর্যকে।
রোদ উঠতেই ফুলে ফুলে দল বেঁধে আসছে মৌমাছি। তাদের গুন গুন শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় সরিষার মাঠের চিত্র এটি।
চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ হানা দেয়ায় সরিষা চাষে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মাদারীপুরের কৃষকরা। তবে যথাসময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারলে এবং ভালো দাম পেলে সেই ক্ষতি কৃষকরা কাটিয়ে উঠবেন বলে মনে করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সদর উপজেলার কুলপদ্বী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সারি সারি সরিষার ক্ষেত। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন হলুদ মাদুর বিছানো হয়েছে ফসলের মাঠে।
শহর থেকে বের হলেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকে আবার হাজির হচ্ছেন সরিষার ক্ষেতগুলোতে। নানা ভঙ্গিমায় তাদের কেউ কেউ তুলছেন ছবি কিংবা সেলফি।
সরিষা চাষি চান মিয়া বলেন, ‘আগে একসময় এই জমিতেই ধান চাষ করতাম। কিন্তু দিন দিন সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর পরিশ্রম বেশি হওয়ায় ধান চাষ বাদ দিয়ে সরিষা লাগাই। সরিষায় পরিশ্রম আর খরচ দুটিই কম।’
ফসলের মাঠে সরিষা ফুলের এই সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। ছবি: নিউজবাংলাআরেক চাষি মোসলেম বেপারী বলেন, ‘সরিষা এইবার ভালোই হইছিল। মাঝখানে টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জইম্মা অনেক গাছ মইরা গেছে। এ জন্য সরিষা এইবার কম পামু। তবে চারপাশে হলুদের এমন ছড়াছড়ি দেখে মোদের ভালোই লাগে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে মাদারীপুরের চারটি উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে দেশি জাতের মাঘী, ধলীসহ উন্নত জাতের বারি-১৪, বারি-১৫ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে।
গত বছর এই আবাদের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার হেক্টর। আর সরিষা উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৬১৮ মেট্রিক টন। এই হিসাবে গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ১.২ টন করে সরিষা উৎপাদন হয়েছিল।
এবার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বাড়লেও ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
এই বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সরিষা চাষ বেশ লাভজনক একটি রবিশস্য, তবে এবার জাওয়াদের প্রভাবে সরিষা চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলে এ বছর মধু উৎপাদনও কম হবে। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো ধরনের প্রণোদনা এলে তা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেয়া হবে।’