ঠাকুরগাঁওয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শহরের রোড রেলস্টেশনের পেছনে ভাড়া বাড়ি থেকে সোমবার রাতে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই ছাত্রীর নাম মাইসা আক্তার। সে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
ছাত্রীর বাবা রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তিনি। মেয়ের এমন মৃত্যু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। একটু পর পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন দিনমজুর রফিকুল।
রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, গত সপ্তাহেই তার মেয়ে মাইসা তাকে পড়ালেখা করে বড় কিছু হয়ে দেখানোর কথা বলছিল।
মাইসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাবা আমি পড়ালেখা করতাছি, কয়েকটা ক্লাস পাস দিছি। আর কয়েকটা ক্লাস পাস দিলেই সরকারি চাকরি পামু। তখন তোমারে আর ভোর সকালে উইঠ্যা শীতের ভেতর আলুক্ষেতে কাজে যাইতে লাগবে না।’
তিনি জানান, পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল মাইসা। চঞ্চলতা ছিল তার ভেতর। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সে মানসিকভাবে হতাশায় ভুগছিল। তাকে অনেক সময় উদাসীন থাকতে দেখা যেত।
কী কারণে এমন ছিল তা জানতে পারেনি পরিবারের কেউ।
রফিকুল জানান, দিনমজুরের কাজ করে যা রোজগার করেছেন তা মাইসার মানসিক চিকিৎসাতে ব্যয় করেছেন তিনি। তারপরও মেয়ের হতাশার ছাপ একটুও কমাতে পারেননি তিনি। মানুষের কালাযাদু ভেবে ওঝা ও কবিরাজের কাছেও পরামর্শ নিয়েছেন অনেকবার।
তার ধারণা নানির বাসায় বেড়াতে গিয়ে খারাপ বাতাস লেগেছে তার মেয়ের।
মাইসার মা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘মাস ছয়েক আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মাইসা। সে সময় ঘরের বাঁশের আড়া ভেঙে পড়েছিল। এর জন্য মানসিক ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাও চলছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিকেলে আমি ওর চিকিৎসার প্রয়োজনে বাইরে যাই। বাসায় কেউ ছিল না। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পাই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
মেয়েকে মানসিক রোগী বলে দাবি করেন তিনি।
প্রতিবেশী ভট্টু মিয়া জানান, তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার মাইসাদের বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দরজার ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে দেখতে পান সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না লাগানো। তারপর কাছে গিয়ে দেখেন মাইসা ঝুলছে। দরজা ভেতর থেকে আটকানো। তখন তিনি চিৎকার করে বেহুঁশ হয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পরে আমরা মাইসার বাবা-মাকে খবর দিই। পুলিশকেও খবর দেয়া হয়।’
ঠাকুরগাঁও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’