বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সারা দেশে যাচ্ছে সাইফুলের রঙিন মাছ

  •    
  • ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:৩৫

গফরগাঁওয়ে সাইফুল ইসলাম মিনু নামের এক মাছচাষি গড়ে তুলেছেন বিদেশি রঙিন মাছের খামার। ১৫ বছর আগে কয়েকটি মাছ দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন ৫০ বিঘা জমিতে ২৬টি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। এ মাছ বিদেশে রপ্তানির কথাও ভাবছেন তিনি।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বারবারিয়া ইউনিয়নের লক্ষণপুর এলাকায় বাহারি রঙের বিদেশি মাছ চাষ করছেন সাইফুল ইসলাম মিনু। মাত্র ছয়টি মাছ দিয়ে পুকুরে চাষ শুরু করে ১৫ বছরে বাণিজ্যিক পর্যায়ে উৎপাদনে গেছেন তিনি। তার উৎপাদিত রঙিন মাছ সারা দেশে বিক্রি করা হচ্ছে।

তার সাফল্য দেখে স্থানীয় মৎস্য খামারিসহ বেকার যুবকরাও রঙিন মাছ চাষে ঝুঁকছেন।

সাইফুল ইসলাম মিনুর গড়ে তোলা আল-আমিন হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ নামক খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য রঙিন মাছকে খাবার দিচ্ছেন শ্রমিকরা৷ পুকুরের কিনারায় সেগুলো দল বেঁধে ভেসে উঠছে। এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন।

কথা হয় ১৮ বছর বয়সী রিয়াদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ মূলত শৌখিন লোকজন কেনে৷ এ জন্য এ মাছের দামও বেশি। ফলে শ্রমিকদের বেতন এখানে বেশি। সে জন্যেই পাঁচ বছর আগে বর্তমান হ্যাচারিতে চাকরি নিয়েছেন। এখানে উপার্জিত টাকা দিয়ে বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছি। এখন যা বেতন পাচ্ছি, তা দিয়ে সংসারের খরচ বহন করেও টাকা আয় করতে পারছি।’

রঙিন মাছ চাষের শুরু থেকে এই হ্যাচারিতে কাজ করেন আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘আগে অন্যের ক্ষেতে-খামারে কাজ করেছি। অনেক সময় বেকার সময় পার করেছি। হ্যাচারির মালিক সাইফুল ইসলাম রঙিন মাছ সার্বক্ষণিক দেখাশোনাসহ পরিচর্যার জন্য আমাকে নিয়ে আসেন। তিনি মাছ চাষে লাভবান হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমি এখানেই কাজ করে সংসারের ভরণপোষণ করছি।’

মাত্র ছয়টি মাছ দিয়ে এই পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন সাইফুল। ছবি: নিউজবাংলা

সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন খামারি রঙিন মাছ চাষ করছেন।

জালাল উদ্দিন নামের স্থানীয় এক খামারি বলেন, ‘৩০ বছর যাবৎ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছি। অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ চাষ করলে ক্রেতা কোথায় পাব, বিদেশি মাছ চাষ করে পথের ফকির হতে হবে– এমন চিন্তাভাবনা থেকে আগ্রহ ছিল না। সাইফুল ইসলাম সাহস করে বিদেশি মাছ আমদানি করে চাষাবাদ শুরু করলে অনেকে হাসি-তামাশা করত। কিন্তু সে কারও কথায় কর্ণপাত না করে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে সফলতা পেয়েছে। এখন তার হ্যাচারি থেকে রঙিন মাছ নিয়ে আমিও চাষ করছি।’

তিনি জানান, একসময় অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ কেনার আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে শৌখিন ক্রেতা প্রচুর। এ মাছের বাজার ভালো। এ জন্য লাভের পরিমাণও বেশি।

সাইফুলের সাফল্য দেখে স্থানীয় মৎস্য খামারিসহ বেকার যুবকরাও রঙিন মাছ চাষে ঝুঁকছেন। ছবি: নিউজবাংলা

শামীম আহম্মেদ নামের এক যুবক বলেন, ‘সাধারণত বাংলা মাছ সবাই চাষ করে। দামের পরিমাণও নির্দিষ্ট। কিন্তু রঙিন মাছের দাম বেশি হলেও ভালো বিক্রি হচ্ছে। অনার্স পাস করে চাকরির পেছনে দৌড়াদৌড়ি করেও উপযুক্ত চাকরি জোটেনি। এ জন্য রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা করছি। সফল রঙিন মাছ চাষি সাইফুল ইসলামের পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করব।’

সাইফুল ইসলাম মিনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৬ সালের দিকে বিভিন্ন বাংলা মাছের চাষ শুরু করেছিলাম। মাছ বিক্রি করে লাভ হলেও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারিনি। ওই সময় অ্যাকুয়ারিয়াম মাছের ক্রেতা কম থাকলেও ভালো দাম পাওয়া যেত। এমন চিন্তাভাবনা থেকে ২০০৭ সালের দিকে অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে জাপান থেকে ছয়টি কই কার্প মাছের পোনা সংগ্রহ করি। এরপর এগুলো থেকেই রেণু উৎপাদন করে পোনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।’

তিনি জানান, মাছ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে আরও ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ সংগ্রহ করা হয়। ধীরে ধীরে হ্যাচারির সংখ্যা বৃদ্ধি করে রেণু উৎপাদন করেন তিনি এবং সেগুলো প্রতিপালন করে সারা দেশে সরবরাহ করতে শুরু করেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট ও খুলনার বিভিন্ন অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানে।

রঙিন এ মাছগুলো বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানে। ছবি: নিউজবাংলা

মাছের দাম সম্পর্কে তিনি জানান, ছোট মাছ প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। আর আকারে একটু বড়গুলো ২ হাজার টাকা থেকে প্রতি পিস ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের ভালো রঙিন একটি মাছের দাম পড়ে ২ লাখ টাকা।

দামি মাছের ক্রেতারা দেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর। যারা রিসোর্টের শোভা বৃদ্ধিতে জলাশয়ে রঙিন মাছ রাখেন।

সাইফুল ইসলাম মিনু বলেন, ‘প্রথমে নিজে চাষ করে এর চাষ-পদ্ধতি শিখেছি। রঙিন মাছ চাষ নতুন হওয়ায় এই কাজে সহযোগিতা করার মতো কেউ ছিল না। শুরুতে মনোবলকে কাজে না লাগালে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ৫০ বিঘা জমিতে ২৬টি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। এখানে ১৫ জন নিয়মিত শ্রমিকসহ ২৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে দুবাই থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আমার মাছ দেখে স্যাম্পল নিয়ে গেছেন। আশা করছি, এসব মাছ দ্রুত রপ্তানি করা সম্ভব হবে। যদি আরও অনেকে বড় পরিসরে এ মাছ উৎপাদন করেন, তাহলে বাংলাদেশে এর দাম আরও কমে আসবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে মাছ আমদানির পরিবর্তে নিয়মিত রপ্তানি করা যাবে।’

বেশি লাভের আশায় দেশি-বিদেশি এসব রঙিন মাছ চাষ করা হচ্ছে। ছবি: ‍নিউজবাংলা

কথা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) ড. মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের ভেতরের শোভা বৃদ্ধির জন্যে আমাদের দেশের মানুষের অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পালনের শখ আছে। এ জন্য বিদেশি প্রজাতির বিভিন্ন রঙিন মাছ উৎপাদন করছেন চাষিরা। এসব মাছ কিনে নিচ্ছেন শৌখিন মানুষজন।’

তিনি জানান, দেশে সাধু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে খলিশা, বাইম, টেংরাসহ আরও কিছু রঙিন মাছ অ্যাকুয়ারিয়ামে পালন করা যায়। কিন্তু এগুলো না নিয়ে বিদেশি মাছের দিকেই ঝুঁকছেন সবাই। কারণ চাষিরা বেশি লাভের আশায় বিদেশি মাছগুলোই অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য উৎপাদন করছেন।

ড. খলিলুর রহমান জানান, দেশি রঙিন মাছ সংগ্রহ করে তারা জিংক ব্যাংকে রাখছেন। ব্যাপক পরিমাণে এসব মাছ উৎপাদন করতে ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু হয়েছে। যদি শৌখিন লোকজন দেশি রঙিন মাছ পালতে আগ্রহী হয়, তাহলে বিদেশি মাছ আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর