করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে চলাচলে নতুন করে দেয়া বিধিনিষেধে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করতে বলা হলেও এবার আর ভাড়া না বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির আগেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দেয়া হবে।
সেদিন তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যদি করোনা আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হবে। এ ছাড়া আমরা বিআরটিএকে বলে দেব, ভাড়াটাড়া বাড়ানো যাবে না। এটা যেহেতু একটি স্পেশাল সিনারিও, সবাইকেই বুঝতে হবে।’
তবে ভাড়া বাড়া বা না বাড়ার বিষয়ে যারা চূড়ান্ত আদেশ জারি করবে-সেই কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা এখনও এ বিষয়ে কোনো আদেশ পাননি।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা মন্ত্রিপরিষদের বিষয়। আমাদের বিষয় না। আমরা এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সেটি কবে হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনটা যে জারি হয়েছে, সেটি আমরা সংবাদে দেখেছি। মন্ত্রণালয় হয়ে আমাদের কাছে আসার পর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাসমালিকরা মানবেন কি না, জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আমরা পালন করার চেষ্টা করব।’
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত জানালে অর্ধেক যাত্রী বহন করার নির্দেশ দেয়া হয়। জানানো হয়, নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ আদায় করা যাবে।
গত বছরের ৫ এপ্রিল লকডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া বিধিনিষেধ আসার আগে আবার বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন করতে বলা হয়। তখনও ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়া হলে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়।
১ জুলাই থেকে শাটডাউন নামে বিধিনিষেধ দেয়া হলে আবার বন্ধ করে দেয়া হয় গণপরিবহন। পরে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে তৃতীয়বারের মতো অর্ধেক যাত্রী তোলে ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়।
তবে তিনবারেই দেখা যায়, প্রথমে দুই-এক দিন অর্ধেক যাত্রী তুললেও পরে প্রতি আসনেই যাত্রী তোলা হয়, এমনকি দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয়া হতে থাকে। কিন্তু ভাড়া ঠিকই ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করা হতে থাকে। এই অবস্থায় একপর্যায়ে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাস ভাড়া এমনিতেই বেড়ে গেছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে কিলোমিটার প্রতি যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, ওয়েবিল নামে এক বিশেষ কৌশলে ঢাকায় আদায় হচ্ছে এর দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ।
এর মধ্যে যখন আবার বিধিনিষেধের কথা আলোচনা হচ্ছিল, তখন মানুষের মধ্যে বাস ভাড়া বাড়ার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।
সাধারণ ছুটি, লকডাউন ও শাটডাউনের পর বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও ট্রেনের ভাড়া অবশ্য বাড়েনি। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ছুটলেও আগের হারেই ভাড়া আদায় করা হয়েছে সরকার পরিচালিত এই বাহনে। তবে লঞ্চে বাসের মতোই ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায় হয়েছে। সেখানেও বাসের মতোই ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগ ছিল।