শামীম ওসমানকে ‘নারায়ণগঞ্জের গডফাদার’ বলে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী যে আক্রমণ করেছেন, তা পাত্তা দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য। বরং তিনি রসিকতার সুরে জবাব দিয়েছেন আইভীকে। বলেছেন, এসব কথা শুনতে শুনতে তার সয়ে গেছে।
সোমবার নারায়ণগঞ্জে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এসে গণমাধ্যমের নানা প্রশ্নের জবাব দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
নৌকার পক্ষে তিনি আছেন কি নেই, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন শামীম। পাশাপাশি তাকে গডফাদার উল্লেখ করে আইভী বারবার যে আক্রমণ করেছেন, তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘কারও যদি ইচ্ছে হয় আমাকে গদফাদার বলতে তো বলবেন। দুদিন আগে ইচ্ছে হয়েছে ফাদার বলতে, বলেছেন। তিন দিন আগে মনে হয়েছে ব্রাদার বলতে, বলেছেন। তবে যে যাই বলেন, গডমাদার বইলেন না। কারণ আমি পুরুষ মানুষ। এসব গালি শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই এসবে আমি এখন ড্যাম কেয়ার।’
এভাবে আক্রমণ করায় আইভীকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার পরামর্শও দেন শামীম ওসমান।
সংসদ সদস্য হওয়ায় সিটি নির্বাচনে প্রচারে আইনি বাধা আছে শামীম ওসমানের পক্ষে। তবে রাজধানী লাগোয়া এই জনপদের নির্বাচনের কোনো অংশ না হয়েও তার নাম আসে প্রতিদিনই। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার যত না তার নাম উচ্চারণ করেন, তার চেয়ে বেশি উচ্চারণ করেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
২০১১ সালে শামীমকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন আইভী। তবে দুইজনের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কেবল দুই ব্যক্তির নয়, দুই পরিবারের লড়াই।
শামীমের বাবা শামসুজ্জোহা ও আইভীর বাবা আলী আহম্মেদ চুনকা পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু নিজেরা জড়িয়ে যান দ্বন্দ্বে, যে দ্বন্দ্ব বয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের সন্তানরা।
২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনের আগেও আইভী বারবার শামীমকে আক্রমণ করেছিলেন। একপর্যায়ে শামীম তাকে ‘বোন’ উল্লেখ করে তার জন্য শাড়ি ও মিষ্টি পাঠান। অনুরোধ করেন তার উপহার দেয়া শাড়ি পরে যেন আইভী ভোট দেন।
এবার নির্বাচনে আইভীর লড়াই ২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন দেয়া প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। এবার দলের সমর্থন পাননি তিনি। বিএনপির সিদ্ধান্ত হলো, তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে কোনো ভোটে আসবে না। সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বিএনপিতে তার সব পদ কেড়েও নেয়া হয়েছে।
আইভী বলছেন, তৈমূর আসলে বিএনপির নন, শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমানের প্রার্থী। এও বলছেন, শামীম ওসমান ‘নারায়ণগঞ্জের গডফাদার।’ পরে বলেছেন, ‘গডফাদার তার ৩০ বছরের উপাধি।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান। ছবি: নিউজবাংলাশুরুতে চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও আর নিজেকে চুপ রাখতে পারেননি শামীম। বলেন, তাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ‘টুইস্ট করে নিউজ করছে’ বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনে কেন তিনিই বারবার ‘সাবজেক্ট’ হন- এমন প্রশ্নও তুলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘ব্যাপারটা গরিবের বউ, সবার ভাবির মতো।’
আইভীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এই কয়েক দিন আমি চুপ ছিলাম। আমি চুপ থাকার কারণে অনেক ইস্যু তৈরি হয়। ইস্যু তৈরি হলে এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ উল্টোপথে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন। আবার কেউ দলের সঙ্গে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন।’
‘মনে কষ্ট ছিল’
সংসদ সদস্য হওয়ায় তার পক্ষে ভোটের প্রচারে নামা সম্ভব নয় উল্লেখ করে শামীম বলেন, ‘এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন। আমি আমার নেতাকর্মীদের আগেই বলেছি নৌকার পক্ষে কাজ করতে। মনের মধ্যে কষ্ট ছিল তাই নামিনি। আমি আজ থেকে ঘোষণা দিয়ে নৌকার পক্ষে নামলাম।’
আইভীকে এবারও এক বিশেষ উপহার দেয়ার কথা বলেন শামীম। তবে সেটি কোনো বস্তু নয়। বলেন, ‘গতবার তো শাড়িতে নৌকা উপহার দিয়েছিলাম। এবার তাকে (আইভীকে) দোয়া উপহার দিলাম।
তবে এই দোয়া যে ব্যক্তি আইভীর প্রতি নয়, নৌকার প্রার্থী আইভীর প্রতি, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হয় শামীমের আরেকটি উক্তিতে। তিনি বলেন, ‘কে প্রার্থী সেটা দেখার সময় নেই। প্রার্থী কলাগাছ না আমগাছ সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটাই- এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকা।’
আগামী ১৬ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের জয় হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত শামীম ওসমান। বলেন, ‘আমি বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, নারায়ণগঞ্জ শেখ হাসিনার ঘাঁটি, নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি। এখানে খেলার চেষ্টা করবেন না।
‘কে কোন রিপোর্ট দিল সেটা দেখার সময় আমাদের নেই। এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের, এই নারায়ণগঞ্জ নৌকার।’
দলের কর্মীদের ভোট চাওয়ার সময় নমনীয় হওয়ার পরামর্শও দেন শামীম ওসমান। বলেন, ‘মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। একে-অপরকে দোষারোপ করে ভোট হয় না। ভোট করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে।
‘আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব, মিছিল-পোস্টারে ভোট আসে না। কে, কী করতে পারবে সেটা আমাদের বলে লাভ নেই, আমরা কী করতে পারব সেটা আমাদের বলেন। আমরা আমাদের মতো করেই এগিয়ে যাব।’
আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়েও কথা বলেন শামীম ওসমান। নৌকা মোকাবিলায় তার প্রতীকের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আপনি আপনার মতো কথা বলতে থাকেন। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু হাতি দিয়া নৌকা ডুবাইবেন এই চিন্তা কইরেন না। এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আমার মনে হয় না, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকাকে ডুবায়ে দেবে।’
ভোটের প্রচারে নেমে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তৈমূরের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে শামীম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী-বিএনপির অত্যাচারে আমরা থাকতে পারিনি। এই জামায়াত-বিএনপি আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল।