ভোটের প্রচারে নামার সুযোগ না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদিনই আলোচনায় শামীম ওসমান। তাকে নিয়ে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, কথা বলছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। কিন্তু কোনো ভাষ্য ছিল না ক্ষমতাসীন দলে জেলার তুমুল আলোচিত নেতার।
ভোটের ছয় দিন আগে প্রকাশ্যে এলেন শামীম ওসমান। বললেন, ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু তাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ‘টুইস্ট করে নিউজ করছে’ বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন শামীম। তবে প্রচারের বিধিনিষেধের কারণে ভোট চাননি। কেবল জানিয়ে রাখলেন, তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে নৌকার পক্ষে সব সময়।
তবে আইভীর পক্ষে কি?- এই প্রশ্নের জবাব সহজে দেয়া যাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের বক্তব্যের করণেই।
তিনি বলেন, ‘কে প্রার্থী, হু কেয়ার্স? প্রার্থী আমগাছ হোক, আর কলাগাছ হোক। সব সময় নৌকার প্রতি সাপোর্ট।’
আগামী ১৬ জানুয়ারির ভোটে দুই প্রার্থীই নারায়ণগঞ্জে আলোচিত। নৌকা নিয়ে আইভী আর হাতি নিয়ে তৈমূর। তবে সমানভাবে উঠে আসছে শামীমের নামও।
আইভী প্রতিদিন আক্রমণ করছেন ২০১১ সালে যাকে হারিয়ে প্রথম মেয়র হন, সেই শামীমকে। তাকে বলছেন ‘গডফাদার।’
তৈমূর বিএনপির নেতা হলেও এই ভোটে দাঁড়ানোয় তার দলীয় সব পদ কেড়ে নিয়েছে দল। তবু রাজধানী লাগোয়া জনপদে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াইয়েই পরিণত হয়েছে।
তবে আইভী বলছেন, ‘তৈমূর বিএনপির নয়, শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমানের প্রার্থী।’
আওয়ামী লীগের মধ্যে দুই পক্ষের টানাটানিতে তৈমূরও কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন শামীম ওসমানকে। তিনি বলেছেন, ‘আমি শামীম ওসমানের পায়ে হাঁটি না।’
শামীম ওসমান নৌকায় ভোট না চাইলেও নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, এখানে অন্য কোনো খেলা খেলার চেষ্টা করবেন না।’
নৌকাকে তৈমূর আলম খন্দকারের মার্কা হাতি হারাতে পারবে না- এ বিষয়েও নিশ্চিত আওয়ামী লীগের এমপি। বলেন, ‘আমার মনে হয় না নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকাকে ডুবায়ে দেবে। হাতি সাইজে বড় হতে পারে; আমরা হাতি কাঁধে নিয়ে দৌড় দেব, কিন্তু নৌকার ওপর উঠতে দেব না।’
আওয়ামী লীগের প্রতি নিজের ও তার পরিবারের নিষ্ঠার বিষয়টিও তুলে ধরেন শামীম ওসমান। বলেন, ‘আমার পিতা মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে আমাদের পরিবারকে, আমাদের তিন ভাইয়ের হাত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জন্য জীবন দিতে।
‘গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছে সত্যি, কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ আওয়ামী লীগের জন্য সব রকম ত্যাগ-তিতিক্ষা করবে। নির্বাচন তো একটা ছোট্ট বিষয়। আওয়ামী লীগ পরিবারের মধ্যে মান-অভিমান থাকবে। সবকিছু ছেড়ে আসেন।’
শামীম ওসমানের দাদা খান বাহাদুর এম ওসমান আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তার ছেলে ও শামীম ওসমানের বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে অবদান রেখেছেন।
পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিকাশে অবদান রাখেন আরেক নেতা আলী আহম্মদ চুনকা। এক দলের হলেও তার সঙ্গে শামসুজ্জোহার দ্বন্দ্ব ছিল। এই চুনকার মেয়েই আইভী। পূর্বপুরুষদের দ্বন্দ্ব এখন বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শামীম-আইভী।