জাফর আলম। কক্সবাজারের উখিয়ার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘর ছিল তার। রোববারের আগুনে পুড়েছে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই। চোখের সামনে সবকিছু শেষ হতে দেখেছেন, যা এত দিন একটু একটু করে গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
পুড়ে যাওয়া কিছু আসবাবপত্র নিয়ে তার আশ্রয় এখন ক্যাম্পের একটি টিকাকেন্দ্রে। সেখানে নিউজবাংলার কাছে আগুনের ভয়াবহতার বর্ণনা দেন তিনি।
জাফর আলম বলেন, ‘রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমার বসতবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আগুন দেখতে পাই। সেটি যে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে তা আন্দাজ ছিল না। প্রাণে বাঁচাতে সবকিছু ফেলে স্ত্রী ও আট সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এরপর চোখের সামনেই সব পুড়ে শেষ।’
তিনি বলেন, ‘পরনের পোশাক ছাড়া কিছু নিতে পারিনি। আগুন দেখে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। এখন যদি একটু সহযোগিতা মেলে, তাহলে আবার নতুন করে শুরু করতে পারব।’
তার মতো আরেক রোহিঙ্গা আলী আহমেদের বসতিও পুড়ে গেছে। তিনিও তেমন কিছুই বের করতে পারেননি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন এত বড় ছিল তখন কিছু বের করার সুযোগ পাইনি। আগুন নিভে যাওয়ার পরে এসে দেখি আমার কিছুই নেই।’
ক্যাম্পের আগুনে পুড়েছে কয়েকটি বাঙালি পরিবারের ঘরও। ক্ষতিগ্রস্তদের একজন মমতাজ বেগম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার। আগুন দেখে ভয়ে বেরিয়ে গেছি। সঙ্গে কিছুই নিতে পারিনি।’
ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসৌদ্দজা নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে তাদের বিভিন্ন অস্থায়ী কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শুকনো খাবারের পাশাপাশি শিশুদের খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এখনও পরিদর্শনে আছি। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে নতুন করে পুনর্বাসন করা হতে পারে।’
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আগুনের সূত্রপাতের কারণটিও স্পষ্ট নয়। আমরা তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াই আছি। তদন্ত করেই বের করা সম্ভব হবে এসব তথ্য পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম।’
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, ক্যাম্পে রোববারের আগুনে হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
উখিয়ার বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালে ২ জানুয়ারি আগুন লাগে। ওই আগুনে কেউ হতাহত না হলেও হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারের ১৬টি কেবিন পুড়ে যায়।
এরও আগে গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে ক্যাম্পে লাগা আগুনে মৃত্যু হয় ১৫ রোহিঙ্গার। পুড়ে যায় ১০ হাজারের মতো ঘর।