বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ঢাকা ম্যারাথনের তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী। মাত্রাতিরিক্ত যানজট হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকায়।
ম্যারাথনের কারণে সোমবার ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। কোনো কোনো সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীদের।
সকাল থেকে যানজটের ভয়াবহ রূপ দেখা যায় মহাখালী-উত্তরা সড়কে। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এই সড়কে। উত্তরা থেকে মহাখালী অভিমুখের যাত্রীরা প্রায় দুই ঘণ্টায়ও রাস্তা পাড়ি দিতে পারেননি।
ব্যাংক কর্মকর্তা রুবেদ আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অফিস ডে’তে এমন আয়োজন একেবারেই অবান্তর, আজকে অন্তত ছুটির ব্যবস্থা করার দরকার ছিল, অথবা ছুটির দিনে এই আয়োজন করা উচিত ছিল। এখন না যেতে পারছি অফিসে না পারছি বাসায় ফিরতে।’
এই সড়কের বিপরীত পাশ বলতে গেলে পুরোটাই ফাঁকা। বনানী থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে সময় লাগছে না খুব একটা। যান চলাচলে প্রায় একই ধরনের স্থবিরতা দেখা যায় গুলশান- হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকার কিছু সড়কে।
তেজগাঁও-মগবাজার-শান্তিনগর-পল্টন-মালিবাগ এলাকায়ও সকাল থেকে দেখা যায় অসহনীয় যানজটের চিত্র। তবে তুলনামূলক সচল রয়েছে ধানমন্ডি-মিরপুর সড়ক। সেসব সড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও সড়কে ভোগান্তি নেই।
সবচেয়ে বেশি নাকাল হয়েছেন হাতিরঝিল লাগোয়া বাসিন্দারা।
বেসরকারি চাকরিজীবী মঈন উদ্দিন। থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার গ্রিনওয়ে সড়কে। অফিস বাড্ডা এলাকায়। বাসা থেকে বের হয়ে মিনিট ছয়েক হেঁটে আসেন মালিবাগ মোড়ে। সেখান থেকে একটা বাসে চেপে বসেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথানের কারণে হাতিরঝিল বন্ধ থাকার বিষয়টি আগেই জানতেন তিনি। ভেবেছেন ম্যারাথন তার পথে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তবে সকালে বের হয়েই দেখেন ভিন্ন দৃশ্যপট। মালিবাগ মোড় থেকে বাস পেলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা আর আগায় না। মিনিট বিশেকের রাস্তা তাকে পাড়ি দিতে হলো প্রায় দুই ঘণ্টায়।
মঈন বলেন, ‘অফিস খোলার দিন এমন আয়োজন সত্যিই দুর্ভোগের। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমে।’
মিরপুরবাসী গণমাধ্যমকর্মী এফরান উদ্দিন কোভিড টেস্টের জন্য এসেছিলেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বাসে উঠে হাসপাতালে আসতে তার সময়ে লেগেছে মাত্র ৪০ মিনিট। জানালেন কোনো যানজট পড়েননি তিনি।
তবে কোভিড টেস্টের নমুনা দিয়ে বাড্ডায় আসতে যখন আরেকটি বাসে উঠলেন, তখন ঘড়িতে বাজে ১১টা ৩৩ মিনিট। আর তিনি যখন বাড্ডায় নামলেন তখন বেজে গেছে ১২টা ১৫মিনিট। সময় চলে গেছে প্রায় এক ঘণ্টা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রগতি সরণিতে বাস আসতেই দেখলাম দীর্ঘ যানজট। গাড়ি আর আগাচ্ছেই না। বাস থেকে নেমে অন্য বাহন নেব, সেই উপায়ও নেই। তাই বিরক্তি নিয়েই বসে থাকতে হলো।’
‘ও’ লেভেল পরীক্ষার্থী সন্তানকে নিয়ে সময়মত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত হতে দেখা যায় মীর নাজমুল আলম নামে এক অভিভাবককে।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কেন্দ্র উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে। বিকেল ৩টায় পরীক্ষা, ১২টায় রামপুরা থেকে রওনা হলাম, রাস্তার যা অবস্থা দেখছি, জানি না ছেলে পরীক্ষা দিতে পারবে কি না।’